আ.লীগকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণাসহ ১৭ সুপারিশ
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০৭
ঢাকা: জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আওয়ামী লীগসহ এর ‘দোসর’দের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করাসহ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে ১৭টি সুপারিশ জমা দিয়েছে সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকারের হাতে দায়িত্ব অর্পণ, জাতীয় নির্বাচনে তিন দিন সাধারণ ছুটি, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আট বিভাগের জন্য আটজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথাও বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটির বর্তমান আইনকে ‘বিতর্কিত’ অভিহিত করে এই আইনেরও সংস্কার চেয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে ইমেইলের মধ্যমে এসব সুপারিশ পাঠিয়েছে দলটি।
দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, সংস্কার কমিশনের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল সোমবার (২৫ নভেম্বর)। কিন্তু অফিসে এসে তাদের (সংস্কার কমিশন) কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই আমরা ইমেইলের মাধ্যমে সুপারিশ জমা দিয়েছি।
গণঅধিকার পরিষদের ১৭ সুপারিশ
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানে নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে হবে;
জুলাই-আগস্ট গণআন্দলোনে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করতে হবে;
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি আট বিভাগে আটজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে;
নির্বাচন কমিশন গঠনের বর্তমান বিতর্কিত সার্চ কমিটির প্রক্রিয়া বাতিল করে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠনে আইন প্রণয়ন করতে হবে। সার্চ কমিটি কমিশনের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমে প্রচার ও গণশুনানির মাধ্যমে নাম চূড়ান্ত করবেন। রাষ্ট্রপতি সেই নামের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। একইস ঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগ দিতে হবে;
উচ্চ কক্ষে ১০০ ও নিম্ন কক্ষে ৩০০ আসনসহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদব্যবস্থা চালু করতে হবে। নিম্ন কক্ষে সরাসরি ভোটে এবং উচ্চ কক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণ করতে হবে;
সংরক্ষিত আসন বাতিল করে সব আসনে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, মাফিয়াদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্ত করতে হবে;
ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানসহ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্ত করতে হবে;
নির্বাচনে কোনো প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক, প্রার্থীর এজেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচন বিঘ্নিত হয়— এমন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে ১০ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখতে হবে। জেলা জজদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে;
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার করা যাবে না। ভোট গ্রহণের অন্তত সাত থেকে ১০ দিন আগে সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দিতে হবে;
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অন্যান্য কমিশনার নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা প্রমাণিত হলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ কোটি কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখতে হবে;
নির্বাচনের কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র ক্যাডার ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে। নির্বাচনকালীন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যাস্ত করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটে অনিয়ম, কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শাস্তিপ্রাপ্ত কাউকে আদালতের অনুমতি ছাড়া শাস্তি প্রত্যাহার না করার বিধান করতে হবে;
জাতীয় পরিচয়পত্রের সব কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে ন্যাস্ত করার পাশাপাশি এর নিরাপত্তা বিধানে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দিতে হবে;
জাতীয় নির্বাচনের দিনসহ আগের দিন ও পরদিন মিলিয়ে নির্বাচনের সময় ছুটি তিন দিন করতে হবে;
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জেলা, উপজেলায় কার্যক্রম নেই— এমন নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন করে রাজনীতিতে কালো টাকা, পেশীশক্তির হ্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে প্রকৃত রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ দিতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে;
স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করে নির্দলীয় রাখতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া বন্ধ করে ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে;
গুরুতর অনিয়ম, কেন্দ্র দখলসহ নৈরাজ্যকর অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন। একইভাবে যেকোনো নির্বাচন বাতিল ও স্থগিত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের থাকবে; এবং
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচনকালীন সামরিক বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নির্বাচনি কর্মকর্তা বিশেষ আইন ১৯৯১-এ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
সারাবাংলা/টিআর/এসআর