চট্টগ্রাম বন্দর
জুলাইয়ের পর কনটেইনার ওঠানামা বেড়েছে, কমেছে জাহাজ আসা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ২২:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের পটপরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানামা বেড়েছে। সার্বিকভাবে কনটেইনার ওঠানামায় গত তিন মাসে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ ও পণ্য ওঠানামা কমেছে। বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজ কমে যাওয়া মানে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়া নয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউস কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে। গত আগস্টে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৯ টিইইউস, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৪ টিইইউস ও অক্টোবরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৯ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে পণ্যবোঝাইয়ের পাশাপাশি খালি কনটেইনারও আছে।
গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কনটেইনার ওঠানামা হয়েছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার টিইইউস। এ হিসেবে ৭৬ হাজার ৯৮৬ টিইইউস বেশি কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে। সার্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ।
গত আগস্ট থেকে অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট দুই কোটি ৯১ লাখ মেট্রিকটন কনটেইনারবাহী ও খোলা পণ্য ওঠানামা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন কম পণ্য ওঠানামা হয়েছে। গতবছরের হিসেবে সেটা ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ কম।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, গত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯৬৬টি। গত বছরের একই সময়ে জাহাজ এসেছিল এক হাজার ২৩টি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আসেন রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত জুলাইয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন খুব বেশি ছিল, আপনারা জানেন তখন বন্দরের কার্যক্রম এবং ডেলিভারিতে প্রভাব পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত তিন মাসে অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবরে আমরা আবার আগের গতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে ৪৫ হাজারের মতো কনটেইনার ইয়ার্ডে জমে গিয়েছিল। সার্বিকভাবে জট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বন্দরের কার্যক্রম স্মুথ হয়ে যাওয়ায় এখন ইয়ার্ডে কনটেইনারের পরিমাণ ৩৫ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।’
জাহাজ আসা ও পণ্য ওঠানামা কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘কনটেইনার জাহাজ আসা কিছুটা কমেছে। তবে এটাকে কমেছে বলা যাবে না। ধরেন, আগে যদি এক হাজার কনটেইনার নিয়ে একটি জাহাজ আসতো, এখন তার চেয়ে বড়ো অর্থাৎ দেড়-দুই হাজার কনটেইনার নিয়ে জাহাজ আসছে। আমদানি-রফতানিতে কোনো প্রভাব পড়েছে, এটা বলা যাবে না।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত ১৯ নভেম্বর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান অবশ্য জানিয়েছিলেন, বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল আগের ৬ থেকে ৮ দিনের পরিবর্তে একদিনে নেমে এসেছে। বন্দর সীমানায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই জেটিতে বার্থিংয়ের শিডিউল পাচ্ছে জাহাজগুলো।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আওতাধীন কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনালের দিয়ে আমদানি-রফতানি ও খালি মিলিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয় ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউস। ২০২২ সালে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪, ২০২১ সালে ৩২ লাখ ১৪ হাজার কনটেইনার পরিবহণ হয়।
এর আগে, ২০২০ সালে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭, ২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭, ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ এবং ২০১৭ সালে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ কনটেইনার পরিবহণ করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।
২০২৩ সালে ১২ কোটি ২ লাখ মেট্রিক টন কার্গো (পণ্য) পরিবহণ হয়। ২০২২ সালে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন ও ২০২১ সালে পরিবহণ হয় ১১ কোটি ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৯ সালে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন।
২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডলিং করে ৪ হাজার ১০৩টি। ২০২২ সালে ৪ হাজার ৩৬১টি, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৫৪টি, ২০২০ সালে ৩ হাজার ৭২৮টি এবং ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৮০৭টি জাহাজ হ্যান্ডেলিং করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম