সাবেক এমপির ছেলেকে তুলে নেওয়ার দাবি, পরে মধ্যস্থতায় মুক্ত
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৫২
রাজশাহী: কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের (এমপি) ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে। তাকে তুলে নেওয়ার পর মায়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। যাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল তার নাম রেজাউন-উল হক তরঙ্গ (২৭)। তিনি রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা রাহেনুল হকের ছেলে।
রাহেনুল হক সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। সোমবার আদালতে তার জামিন হয়। তরঙ্গের মা নার্গিস খাতুন চারঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র। তার অভিযোগ, ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী তার ছেলেকে কারাগারের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নার্গিস খাতুনের সঙ্গে কথা বলছেন স্থানীয় যুবদল নেতা মোমিনসহ কয়েকজন। তারা নার্গিসকে আশ্বস্ত করছেন যে, যারা তরঙ্গকে তুলে নিয়ে গেছেন, তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তারা তরঙ্গকে ছেড়ে দেবেন।
কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন নগরের রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম। নার্গিস খাতুন ওসিকে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, তার স্বামী অসুস্থ। এই কারণে সোমবার আদালতে তার জামিন হয়েছে। সন্ধ্যার পর কারাগার থেকে বের হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য সন্ধ্যার পর তিনি, তার ছেলে তরঙ্গ, তাদের আত্মীয় আবেশ ও তাদের আইনজীবী কারাগারের সামনে আসেন। কিন্তু কারাগারের সামনে বসার জায়গা না পেয়ে তিনি ও আবেশ পাশের মোড়ের দিকে যান।
নার্গিস খাতুনের অভিযোগ, কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন তার ছেলে তরঙ্গ ও আইনজীবী। ওই সময় ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী এসে তাদের আইনজীবীকে মারধর করে তরঙ্গকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর নার্গিস খাতুন ছেলের মোবাইলে কল দেন। তখন তরঙ্গ তার মা নার্গিসকে জানান, তাকে কারাগারসংলগ্ন পদ্মা নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় তরঙ্গ তার মাকে জানান, তার কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। তার মা যেন দ্রুতই এই টাকা ম্যানেজ করেন।
নার্গিস খাতুন ওসিকে আরও জানান, কিছুক্ষণ পর কারাগারের সামনে যুবদল-ছাত্রদলের কয়েকজন আসেন। তারা তাদের এক আত্মীয়ের পরিচিত। ছাত্রদল-যুবদলের এই নেতাকর্মীরা তরঙ্গকে উদ্ধারে মধ্যস্থতা করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তরঙ্গকে লালন শাহ মুক্তমঞ্চ এলাকায় তার এক মামাতো ভাইয়ের কাছে দেওয়া হয়। ওই মামাতো ভাই তরঙ্গকে নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় তাদের বাড়ি নিয়ে যান।
নার্গিস জানান, তুলে নেওয়ার পর তার ছেলেকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়নি। ছাত্রদল-যুবদলের কয়েকজনের মধ্যস্থতার কারণে মুক্তিপণও দেওয়া লাগেনি। তুলে নেওয়ার ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করবেন কি না? জানতে চাইলে নার্গিস খাতুন বলেন, ‘অভিযোগ আর কাকে দেব! কাউকে অভিযোগ দেব না। আল্লাহর কাছেই বিচার দেওয়া থাকল।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘তরঙ্গ ছাত্রলীগ করতো। সে কারণে স্থানীয় কিছু ছেলে তাকে আটকেছিল পুলিশের হাতে তুলে দিতে। আমরা ছেলেটাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি।’
মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মর্তুজা ফামিন বলেন, ‘পুলিশের হাতে তুলে দিতে আমাদের কিছু ছেলে তরঙ্গকে আটকে রেখেছিল। বিষয়টি জানার পর আমরা তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। কারণ, তরঙ্গের আত্মীয়-স্বজন আমাদের পরিচিত। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মারধর কেউ করেনি। কেউ মুক্তিপণ দাবি করেছিল কি না সেটি আমার জানা নেই।’
রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ বিষয়টি আমাদের পুলিশ কমিশনার স্যারকে জানান। সেখান থেকে খবর পেয়ে আমি কারাগারের সামনে গিয়ে তরঙ্গের মা নার্গিস খাতুনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এর মধ্যেই নার্গিসের মোবাইলে কল আসে যে তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম