চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিলাসবহুল একটি নিশান পেট্রল সাফারি জিপ, যার আমদানি শুল্কই আসে প্রায় দশ কোটি টাকা। এ গাড়ি দিব্যি চলছিল চট্টগ্রামের সড়কে। কিন্তু গাড়িটি কারা বিদেশ থেকে আমদানি করেছে, কী প্রক্রিয়ায় সেটি বন্দর থেকে বেরিয়ে গেছে- তার কোনো নথিপত্র নেই কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। এমনকি গাড়িটি বিআরটিএ’র নিবন্ধনও পেয়েছিল।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ‘অভিজাত পল্লী’ পশ্চিম খুলশীর রোজ ভ্যালি আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে গাড়িটি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রায় ১০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অবৈধভাবে ছাড় করা হয়েছিল।
রাত পৌনে ১১টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বিল্লাল হোসেন। বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গাড়িটির বর্তমান মালিক ওসমান গণি নামে এক ব্যক্তি। তবে সেটি তার শ্যালক পারভেজ উদ্দিনের জিম্মায় ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অবৈধভাবে খালাসের তথ্য পেয়ে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ওই গাড়িটি নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। এর পর গাড়ির মালিকের প্রতিনিধি পারভেজের কাছে এর আমদানি সংক্রান্ত নথি তলব করা হলেও তিনি সেটি উপস্থাপন করতে পারেননি।
পারভেজ উদ্দিন একটি হলফনামা দাখিল করেন। এতে দেখা যায়, ওসমান গণি মেঘনা সিডস ক্রাসিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়িটি দেড় কোটি টাকায় কিনেছিলেন। ওসমান গাড়ি আমদানির সব নথিপত্র বুঝে পেয়েছেন এবং সরকারি রাজস্ব সংক্রান্তে কোনো জটিলতা হলে তিনি তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব বহন করবেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।
পরবর্তী সময়ে কাস্টমস গোয়েন্দা টিম মেঘনা সিডস ক্রাসিং লিমিটেডের প্রতিনিধিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রতিনিধি জানান, তারা গাড়িটি আমদানি ও কেনাবেচা সংক্রান্ত কোনো নথি তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে খোঁজ নিয়ে গোয়েন্দা টিম জানতে পারে, গাড়িটির আমদানি ও বন্দর থেকে ছাড় সংক্রান্ত কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি।
২০১৫ মডেলের নিশান সাফারি গাড়িটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে নিবন্ধনও পেয়েছিল। কিন্তু আমদানি সংক্রান্ত যে নথির বিপরীতে সেটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল, সেই নথিও মেলেনি বিআরটিএতে।
এ অবস্থায় কাস্টমস গোয়েন্দা দল গাড়িটি অবৈধভাবে আমদানির পর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়ের বিষয় নিশ্চিত হয়। এর পর সোমবার বিকেলে গাড়িটি আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের গুদামে জমা দেওয়া হয়।
কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গাড়িটির নির্ধারিত শুল্ক-কর আমদানি মূল্যের ৮২৭ শতাংশ, যা প্রায় ১০ কোটি টাকা। চোরাচালানের অভিযোগে কাস্টমস আইনের ২(২৪), ১৮, ৩৩, ৮১, ৯০ ধারায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।