‘পেছনে থেকে তারা দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে’
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৫
ঢাকা: গত দুই দিনের সহিংস ঘটনার নেপথ্যে ‘পুরনো শত্রু’দের ভূমিকা দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, দেশের চারদিকের অবস্থা দেখে অনেকে আতঙ্কিত হচ্ছেন, উদ্বিগ্ন হচ্ছেন— এগুলো কী হচ্ছে? আপনাদের বুঝতে হবে, আমাদের সেই শত্রুরা, যারা সামনে থেকে চলে গেছে, তারা পেছন থেকে দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, দেশের মানুষেরা কেন জানি না সহনশীলতার অভাব হয়ে গেছে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হোটেল লেকশোরে ‘তারেক রহমান: পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অন্তবর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ, এ সরকার ফেল করলে অভ্যুত্থান ফেল করে যাবে, বিপ্লব ফেল করে যাবে। আমরা আবারও সেই অন্ধকারে চলে যাব। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার মনে হয় পজেটিভ চিন্তা করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘একটা ভয়াবহ কাজ শুরু হয়েছে। যেটা হচ্ছে, সংবাদপত্রের ওপর আঘাত, স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আঘাত। যার জন্য আমরা সবসময় সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। সেদিন বণিক বার্তার সম্পাদক আমাকে বলছিলেন, আপনারা এই বিষয়টিকে জোরে বলেন না কেন যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে খালেদা জিয়ার সময়ে, বিএনপির সময়ে— এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ যখন দেখছি, কিছু হঠকারী, কিছু উসকানিদাতা বিভিন্নভাবে এই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করবার চেষ্টা করছেন, ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন, যেটা কোনোমতেই সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষের মেনে নেওয়া উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাব, অনুগ্রহ করে এই ভয়াবহ আত্মহননের পথ থেকে সরে আসুন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করুন।’
তিনি বলেন, ‘যে সব কোমলমতি বালক, ছাত্ররা যে সব কাজ করছে, তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। এটি একটি অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের পক্ষে সবকিছু একসঙ্গে করে ফেলা সম্ভব নয়। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।’
‘গতকাল তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার করতে হবে, আমরা সংস্কারবিরোধী নই। সংস্কার করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কেন নির্বাচনে যেতে চাই, এ কথা আমি বারবার বলেছি। নির্বাচন ছাড়া এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই পারে এ সব সমস্যা সমাধান করতে। অন্তত তার পেছনে যে জনশক্তি থাকে, যে ম্যান্ডেট থাকে, সেই ম্যান্ডেট নিয়েই সেটা তার পক্ষে করা সম্ভব হবে,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহআন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বর হোসেন ও শরীফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ; ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী; চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম ও ইসমাইল জবিহউল্লাহ; সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী; যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ; কেন্দ্রীয় নেতা মাহবী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ ও আফরোজা আব্বাস; বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীনসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর