বাংলাদেশ-মালদ্বীপ সরাসরি জাহাজ চলাচল শিগগিরই
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচলের চিন্তা করছে মালদ্বীপ। এ বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই জাহাজ চলাচল চালু হলে উভয় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে নৌ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনিন রশীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে নৌ উপদেষ্টা বলেন, ‘মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উভয় দেশই ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মেরিটাইম সেক্টরে সমৃদ্ধ। মালদ্বীপ বাংলাদেশ থেকে টেক্সটাইল, ফল-মূল, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে। একইভাবে মালদ্বীপেও বাংলাদেশের এক লাখের ওপর অভিবাসী সুনাম নিয়ে কাজ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মালদ্বীপের নির্মাণ, পর্যটন, বিপণন, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য খাতসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই কাজ করছে। এর মাধ্যমে বন্ধু প্রতীম দুই দেশেরই অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। মালদ্বীপ বাংলাদেশ থেকে পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি করতে পারে।’
এ সময় নৌপরিবহন উপদেষ্টা বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলোতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য মালদ্বীপ থেকে ক্যাডেট পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলোতে মেরিনবিষয়ক আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মালদ্বীপের নিয়মিত ক্যাডেটরা এখান থেকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ নিতে পারে।’
হাইকমিশনার উপদেষ্টার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশের সাথে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিনিময় কর্মসূচিতে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী। এছাড়াও মালদ্বীপের ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ট্রান্সশিপমেন্ট নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।’ দুই দেশের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন হাইকমিশনার।
মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনিন রশীদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের মধ্যে শিগগিরই সরাসরি জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হবে। মালদ্বীপের ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক। উভয় দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়াতে সরাসরি জাহাজ চলাচল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কন্টেইনার, সাধারণ যাত্রী বা মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি সমুদ্রপথে উভয় দেশের মধ্যে ক্রুজ সার্ভিস চালু করা যেতে পারে।’ এর মধ্য দিয়ে উভয় দেশের পর্যটন বিকশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন হাইকমিশনার।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় আইএমও নির্বাচনে সি-ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দিতা করবে মর্মে মালদ্বীপের হাইকমিশনারকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান তিনটি বৃহৎ সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় চুয়ান্নটি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে। হাজারের উপর নদ-নদী দেশজুড়ে জালের মতো বিস্তৃত। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে আরও এগিয়ে নিতে এবং মেরিটাইম সেক্টরের বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা আসন্ন আএমও নির্বাচনে মালদ্বীপের সমর্থন প্রত্যাশা করেন।’
সাক্ষাৎকালে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বিদোষ চন্দ্র বর্মন উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম