বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয়
প্রশ্নের মুখে বানৌজা শেরেবাংলা পটুয়াখালী স্থাপন প্রকল্প
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১০
ঢাকা: প্রশ্নের মুখে পড়েছে বানৌজা শেরেবাংলা পটুয়াখালী স্থাপন প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয় প্রস্তাব। ‘বানৌজা শেরেবাংলা পটুয়াখালী স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাব নিয়ে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘ ছয় বছর পার হলেও প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি গত জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রকল্পটির ধরা হয়েছে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ টাকার প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য খাতে। অন্যদিকে মাত্র ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ভবন নির্মাণ খাতে।
প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, মূল প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি একনেক সভায় মোট এক হাজার ৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন পায়। পরে ২০২১ সালের ১৭ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবার ব্যয় না বাড়িয়েও মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে।
ওই বছরেই একনেক সভায় মোট এক হাজার ২৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হয়। এরপর চলতি বছরের ২৭ জুলাই পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয়বার ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে এ বছরের ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন অর্থাৎ ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৮৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা এক হাজার ২৭৮ কোটি ২৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পার হলেও প্রকল্পের আওতায় কার্যাবলি এ পর্যন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়ে সভায় ব্যাখা চাওয়া হয়।
জানা যায়, অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ২৯৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬২৩ দশমিক ৯২ একর ভূমি অধিগ্রহণ। এর মধ্যে ২২১ দশমিক ৮১৬৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ২১১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪০৯ দশমিক ১০৩৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এ খাতে ৮৫ কোটি ৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা অব্যয়িত রয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে পায়রা পোর্টের নির্মাণাধীন ৬-লেন সড়কের সঙ্গে ঘাটির সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য আরও ১১ দশমিক ৫৬ একর জমিসহ মোট ২৩৩ দশমিক ৩৭৬৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৭০ কোটি টাকা ভবন ও স্থাপনা খাতে স্থানান্তর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে পিইসি সভায়।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ২৪ হাজার ৮৩০ বর্গমিটার অনাবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ অতিরিক্ত চার কোটি ২৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ৮২ হাজার ৩২১ দশমিক ৮৯ বর্গ মিটার আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ অতিরিক্ত ৪৫ কোটি ৪৮ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ৬৪ হাজার ৪৪ দশমিক ২৯ বর্গ মিটার অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ অতিরিক্ত ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব নিয়েও জানতে চাওয়া হয় প্রকল্প সংশিষ্টদের কাছে।
প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাবদ চার কোটি ৪১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, বৈদ্যুতিক স্থাপনা বাবদ দুই কোটি টাকা, সম্মানি ভাতা বাবদ ২৫ লাখ টাকা, স্ট্যাম্প ও সিল বাবদ ১৫ লাখ টাকা এবং পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিক্যান্ট বাবদ ১০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় মোটরযান বাবদ ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, টেস্টিং ফি বাবদ তিন লাখ ২৭ হাজার টাকা, লোড টেস্ট বাবদ এক কোটি ১৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, স্লুইস গেট বাবদ ১২ লাখ টাকা এবং নলকূপ স্থাপন বাবদ ৯৬ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অডিও ভিজ্যুয়াল মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ইকুইপমেন্টসের থোকের পরিবর্তে সংখ্যায় উল্লেখ করা প্রয়োজন এবং এ খাতে ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অন্যান্যের মধ্যে সিসিটিভি ও ইন্টারনেটের সংখ্যা উল্লেখ করে এ খাতে ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়েও সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে কম্বাইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের জন্য ওভার হেড ক্রেন বাবদ ব্যয় নির্ধারণ ছির ৪০ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে অতিরিক্ত দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি মেইন গেট নির্মাণ বাবদ অতিরিক্ত এক কোটি টাকা এবং বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ বাবদ অতিরিক্ত পাঁচ কোটি ১৩ লাখ সাত হাজার টাকা বাড়ানোরবৃ প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রকল্পসংশিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সভায়।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ৬২০ দশমিক ৯২ একর ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২২১ দশমিক ৮১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা বাবদ ২১১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে মৌজা মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ৮৫ কোটি ৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে ৪০৯ দশমিক ১০৩৭ একর জমি অধিগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বর্তমানে সরাসরি সড়ক সংযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে পায়রা পোর্টের নির্মণাধীন ৬-লেন সড়কের সঙ্গে ঘাঁটির সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য অপরিহার্য নূন্যতম ১১ দশমিক ৫৬ একর জমিসহ সর্বমোট ২৩৩ দশমিক ৩৭৬৩ একর জমির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ব্যয় ২২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৭০ কোটি টাকা ভবন ও স্থাপনা খাতে স্থানান্তর করা আবশ্যক তাই প্রকল্পটির সংশোধন প্রয়োজন।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস