দানেশ আজাদীর ৩ প্রতিষ্ঠানে চাকরি! তিন ছেলে-মেয়েও…
১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০০
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে নিয়ম-নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তিন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন মো. দানেশ আলী আজাদী (৫৫)। ভোগ করেছেন তিন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা। তিনি একাধারে মাদরাসা শিক্ষক, গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার। ছাড়াও তারই তিনি ছেলে-মেয়ে চাকরি করেন তার সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানে।
মো. দানেশ আলী আজাদী খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মধ্যনগর এলাকার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দানেশ আজাদী মধ্যনগর সিনিয়র আলিম মাদরাসার ইবতেদায়ি বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট (এমপিওভুক্ত শিক্ষক)। পাশাপাশি গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্য ও পানছড়ি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকারও।
দানেশ আলী মাদরাসা শিক্ষকতার নামে সরকারি কোষাগার থেকে মাসিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং মাদরাসা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) থেকে মাসিক পাচ্ছেন ৩ হাজার টাকা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।
দানেশ আজাদী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বে থাকার সুবাদে তার তিনি ছেলে-মেয়েকে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেন।
মেয়ে রেবেকা পারভীন স্বপ্নাকে চাকরি দিয়েছেন ফাউন্ডেশনের আওতায়ধীন গণশিক্ষা কেন্দ্রে। সরেজমিন কেন্দ্রের কোনো সাইন বোর্ড না থাকলেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন তার মেয়ে।
বড় ছেলে মো. রেজাউল করিম ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিন বছর আগে। সে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক। তার কেন্দ্রেরও কোনো অস্থিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। আশেপাশের কেন্দ্রের সহকর্মী শিক্ষকরাও জানেন না যে সে একজন শিক্ষক। বছরের পর বছর শিক্ষকতা না করেই মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতন নিচ্ছেন ওই অটোরিকশা চালক।
মেজ ছেলে মো. রাকিবুল ইসলাম একই ফাউন্ডেশনের নূরাণী কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি বাড়ির পাশের একটি মক্তবেও শিক্ষকতা করেন। তিনি মক্তবে সকালে পড়ান। মক্তবের পাশাপাশি বেতন নেন ইসলামি ফাউন্ডেশন থেকেও।
পানছড়ি মধ্যনগর বাইতুন নূর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল হক জানান, সকালে মক্তবে পড়ায় রাকিব। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আলাদা প্রকল্প। তিনি আলাদাভাবে পড়ানো কথা। কিন্তু তিনি তা করছেন না।
অভিযোগের বিষয়ে দানেশ আলী বলেন, মাদরাসা চাকরি এমপিওভুক্ত না। যেটা পাই সেটা রাজস্বও না, এটা সম্মানী। আরও দুই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি।
তিন ছেলে-মেয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা চাকরি পেয়েছে। কে কী-ভাবে বেতন নিচ্ছে তা কর্তৃপক্ষ দেখবে।
মধ্যনগর সিনিয়র আলিম মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো.তমিজ উদ্দিন জানান, দানেশ আজাদী অত্র মাদরাসার এবতেদায়ী বিভাগের সুপারিনটেনডেন্টের দায়িত্বে আছেন। তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক। সরকারি কোষাগার ও মাদরাসা থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। তবে তিনি ঠিকমতো পাঠদান করান না। যেখানে প্রতিদিন ৬-৭ টি ক্লাস নেওয়ার কথা সেখানে তিনি ২-৩ টি ক্লাস নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাজ দেখিয়ে মাদরাসা থেকে চলে যান।
গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) প্লাটুন কমান্ডার মো. আকবর আলী জানান, চাকরি নেওয়ার পর থেকে দানেশ আজাদী একদিনও দায়িত্ব পালন করেননি। অন্যদের দিয়ে ডিউটি করিয়ে তাদের কিছু টাকা দিয়ে আসছেন। তার ডিউটি না করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
পানছড়ি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী আকাশ জানান, সরকারি রাজস্ব খাতের আওতাভুক্ত কেউ একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে না। তার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার মো. ইউসুফ বাহার জানান, একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি সত্য হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসআর
ইসলামিক ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়ি দানেশ আলী আজাদী মধ্যনগর সিনিয়র আলিম মাদরাসা