পাহাড় ধস: রাঙ্গামাটিতে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা, বিপর্যস্ত জীবন
১২ জুন ২০১৮ ২২:২৯
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাঙ্গামাটি: টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটিতে মাটি চাপা পড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১২ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার সদরে নানিয়ারচর থেকে দশজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে নিখোঁজ একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া নানিয়ারচরে তিন জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে রাঙ্গামাটিতে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নানিয়ারচর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোয়ালিটি জানান, উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের বড়পুলপাড়ায় ৪ জন, ধর্মচানপাড়া ৪ জন এবং হাতিমারায় ২ জন, ঘিলাছড়িতে ১ জন পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে মারা গেছেন। এদিকে রাঙ্গামাটি পৌর শহরের ২০ থেকে ২৫টি স্থানে মাটি ধসের ঘটনা ঘটলেও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের মূল সড়ক ভেঙ্গে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৩ দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে নানিয়ারচর উপজেলার বড়পুল পাড়ায় পাহাড় ভেঙ্গে একটি বাড়ীর উপ পড়লে একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয় এবং ধর্মচান পাড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঘর ভেঙ্গে একই পরিবারের ৪ জন এবং হাতিমারায় ২ ভাই বোন ও ঘিলাছড়িতে ১ জন মারা গেছেন। এছাড়া এই স্থানে ৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন, বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধরমপাশা কার্বারী পাড়ায় ফুলদেবী চাকমা (৫৫), তার মেয়ে ইতি দেওয়ান (১৯), পুত্রপধু স্মৃতি চাকমা (২৩), নাতি আয়ুব দেওয়ান (দেড় বছর), নানিয়ারচর বড়পুল পাড়ায় সুরেন্দ্র লাল চাকমা (৫৫), তার স্ত্রী রাজ্য দেবী চাকমা (৫০), মেয়ে সেনালী চাকমা (১৩), নানিয়ারচর ইউনয়নের বড়পুলপাড়ার মহিলা মেম্বারের ছেলে রোমেন চাকমা (১৪), ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বৃষ কেতু চাকমা, (৬০), হাতিমারা এলাকার রিপোল চাকমা (১৪) ও রীতা চাকমা (৮)।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদীব কান্তি দাশ জানান, রাঙ্গামাটিতে এক টানা ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে রাঙ্গমাটির জনজীবন থমকে যায়। সোমবার দিবাগত রাত রাত ২টার দিকে রাঙ্গামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকায় একটি বিশাল ওয়াল ধসে পড়ে একটি বাড়ির লোকজন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওয়াল ভেঙ্গে তাদের উদ্ধার করে।
এছাড়া চম্পক নগর, লোকনাথ আশ্রম ও ভেদভেদী, রাঙ্গাপানিসহ আশেপাশে কিছু এলাকায় ছোটখাটো দেয়াল ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে ঘরবাড়ির উপর দেয়াল চাপা পড়লেও হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
তিনি আরও জানান, রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। তবে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের রানীরহাট সড়কের উপর পানি উঠে গেলে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদীব কান্তি দাশ জানান, হাতিমারায় পাহাড় ধসে নিহতদের সৎকারের জন্য দুইজনকে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেছি। এছাড়া নিহত অপর ৯ জনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।
এদিকে, রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের এসও মো. আবু মুছা বলেন, রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটি সড়কের পাহাড় ধসে পড়া মাটি পরিস্কার করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছি। তিনি বলেন, ধেপ্পোছড়ি এলাকা পাহাড় ধসে মূল সড়কও ভেঙ্গে গেছে।
সারাবাংলা/টিএম
আরও পড়ুন
রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু