তথ্য চাওয়ায় ক্ষেপে গেলেন রেল কমকর্তা, ৩ সাংবাদিককে হেনস্তা
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:২১
লালমনিরহাট: লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে, ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে—এমন অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গেলে রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী তিন সাংবাদিক হলেন— ঢাকা পোস্টের নিয়াজ আহমেদ সিপন, ঢাকা ট্রিবিউনের মহসীন ইসলাম শাওন এবং দূরবীন নিউজের জুয়াবের আহমেদ খান।
সাংবাদিকদের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চলন্ত একটি আন্তনগর ট্রেনে ইউনিফর্ম পরিহিত দুই পরিচর্যক (অ্যাটেনডেন্ট) বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে দরদাম করে টাকা নিচ্ছেন। ১৯ নভেম্বর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে, যার ভিডিও একজন যাত্রী ধারণ করেন। ওই দুই পরিচর্যকের নাম সোহেল রানা ও মো. রাহাত।
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, রোববার বিকেলে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া নিয়ে সাংবাদিকরা রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবুর কক্ষে যান। সেখানে নিজেদের পরিচয় দিয়ে ওই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে, ওই কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক নিয়াজ আহমেদ সিপন বলেন, ওই কর্মকর্তা নিজেকে দেশের প্রথম ‘শিশু সাংবাদিক’ দাবি করে নানা ধরনের দম্ভোক্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের ‘গেট আউট’ বলে কক্ষে থেকে বের করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে ওই কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিদিনই বিনা টিকিটে যাত্রীদের কাছ থেকে পরিচর্যকরা টাকা আদায় করেন। আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগনের প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবুর পকেটে যায়। লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে অফিসে তাকে ‘উগ্র কর্মকর্তা’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর গত ১ অক্টোবর তাকে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগনের প্রকৌশলী পদ থেকে বিভাগীয় পার্সোনাল অফিসার পদে বদলি করা হয়। তবে সেই পদে যোগদান না করে তিনি নানা কৌশল ব্যবহার করে আগের পদে থেকেই যান। কিছু লোকজন দিয়ে বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনও করান তিনি। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর তিনি ফের শোকজ পান।
এছাড়া একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় আশীর্বাদ এবং খুঁটির জোরে তিনি লালমনিরহাট থেকে সরেননি। এছাড়া বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে আতাত করে রেল বিভাগের কাজের টাকায় ভাগ বসাতেন।
এদিকে লালমনিরহাটে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর জন্য সম্প্রতি প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে নতুন করে ‘টার্নটেবিল’ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি উদ্বোধনের আগেই ভার বহনে অক্ষম হয়ে পড়েছে।
এ বিষয় লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘যাত্রীসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ধরণের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করার বিষয়েও তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে ‘টার্নটেবিল’ নির্মাণ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার।
সারাবাংলা/ইআ