ভারতীয় দূতাবাসে না গিয়ে ডিসির মাধ্যমে হেফাজতের স্মারকলিপি
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০৭ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘোষণা দিলেও ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে মিছিল নিয়ে যায়নি হেফাজতে ইসলাম। এর পরিবর্তে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মাধ্যমে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ঘোষিত লংমার্চ কর্মসূচি শেষ করেছে সংগঠনটি।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সোমবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ভারতীয় দূতাবাস কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজাহার।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই নগরীর ওয়াসার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে আসতে থাকেন। সেখানেই সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর। সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে ভারতীয় দূতাবাস কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
সমাবেশ শেষে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজাহারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল স্মারকলিপি নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান।
স্মারকলিপিতে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। দাবিগুলো হলো- ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ, ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা, বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সকল ধরণের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ও ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের মসৃণতা বজায় রাখা।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজাহার বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হাসিনা চলে যাওয়ার পর আমরা দেখলাম অতি বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হঠাৎ করে সরগরম হয়ে উঠল। বিগত ১৭ বছরে হাসিনার ফ্যাসিজম এবং বর্তমান বাংলাদেশের অস্থিরতার পেছনে আওয়ামী লীগ একা দায়ী নয়। তার পেছনে হিন্দুস্তানের আধিপাত্যকে আমি প্রধান দায়ী করতে চাই।’
হেফাজতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে পুনর্গঠন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ এখানে আমরা আবেগের জায়গা থেকে আসিনি। আমরা বিবেকের তাড়না থেকে এসেছি। আমাদের হেফাজতের এ সংগ্রাম বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সংগ্রাম। হেফাজতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে পুনর্গঠন হবে না। আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, বিগত দিনে আন্দোলন করেছেন তাদের আমি বলতে চাই- কেন শুধু আপনারা ফ্যাসিবাদের কথা বলেন। ফ্যাসিবাদের পেছনে যে ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাত রয়েছে তার কথা কেনো আপনারা বলেন না।’
হেফাজতের নেতা হারুন ইজাহার বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিজমের এ বটবৃক্ষের ডালপালা কেটে দিয়েছি। শেকড় এখনও রয়ে গেছে। আজ আমরা শুধু চিম্ময়ের বিষয় নিয়ে এখানে আসিনি। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ অসংখ্য সংগঠনকে ভারত পেট্রোনাইজ করে। অনেক হিন্দু নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তারা যাতে মাঠে এসে ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলতে। আমি সেসব হিন্দু নেতাদের ধন্যবাদ জানাই যারা ভারতের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। চিম্ময়সহ অনেকে ভারতের টাকা খেয়ে ও তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে। যা কিছু হচ্ছে বাংলাদেশে সুপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বললাম গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলিপি দিবো, সাথে সাথে আমাদের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর হয়ে গেলেন। এত ভয় পান কেন ভারতকে? গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অনুরোধ করেছেন, আমরা যাতে ভারতীয় দূতাবাসে মিছিল নিয়ে না যাই। আমরা বলেছি, আমাদের কর্মীরা শিক্ষিত। তারা ইট নিক্ষেপ করবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে স্মারকলিপি দেব।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজাহার বলেন, ‘প্রভুর কাজ হলো আপনাকে দাস বানিয়ে রাখা। যেদিন আপনি চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবেন, সীমান্তে আমার ভাই হত্যার প্রতিশোধ নেবেন, যেদিন আপনি ভারতকে ডেকে পাঠাবেন এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক আগ্রাসানের বিরুদ্ধে আপনি পালটা জবাব দেবেন সেদিন ওই দেশ আপনাকে শ্রদ্ধা করবে।’
‘আমরা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে বলব, ভারতের বিকল্প আমাদের অন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলো রয়েছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করুন। আমরা পাকিস্তানের কথা বলছি না। আমরা পাকিস্তানি অ্যাম্বাসির টাকা নেই না। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করতে আমাদের আপত্তি নেই। ভারতের সঙ্গে আমরা একটি ভারসাম্য চাই। ভারতের সঙ্গে কোনো যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি না। ভারত যদি কোনো যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাই সেটা টেকিয়ে দেওয়ার শক্তি কিন্তু আমাদের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ এ সমাবেশ থেকে আমি চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনকে হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই আপনি আপনার সরকারকে বলে দিন, বাংলাদেশ বিরোধী সকল কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। আপনার দেশের সকল রাজনীতিবিদদের মুখে লাগাম লাগান। আপনার দেশের গোয়েন্দা বাহিনী এখানে একটি সামরিক হামলার পরিকল্পনাও করে রেখেছে। ভারতকে বলে দিচ্ছি ১৭ বছর হাসিনাকে চেপে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে নতুন কোনো আর দালালকে আমরা মেনে নেব না। ভারত যদি শান্তি চায়, তাহলে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে।’
হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব হাবিবুল্লাহ আজাদী বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের পতনের পরলক্ষ্য করছি পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়াগুলো তাদের ইচ্ছামতো সংবাদ সম্প্রচার করছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে। যে পতাকা আমরা অসংখ্য শহীদের লাশের বিনিময়ে পেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার ছবি পদদলিত করেছে। আমাদের ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।’
নগর হেফাজতে ইসলামের নেতা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসকনের সঙ্গে কোনো ডায়ালগ হবে না। সাধারণ হিন্দুদের সঙ্গে আলোচনা হবে। ইসকন বাংলাদেশের জন্য ক্যান্সার। আর ক্যান্সার হলে অপারেশন করতে হবে। অপারেশন ছাড়া বাংলাদেশে শান্তি বিরাজমান হবে না। ইসকনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর আইয়ুব বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসিচিব জাফর আহমেদ, নাছির মনির ও মীর ইদ্রিস।
সারাবাংলা/আইসি/এনজে