Monday 02 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসামির পক্ষে ওকালতনামা দিয়ে ‘পদত্যাগে বাধ্য’ এপিপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৪ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৩৭

মহানগর পিপি ও এপিপি’র পদত্যাগ দাবিতে মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় ‍কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় সংঘাতের ঘটনায় করা মামলার দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ নিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের একাংশের তোপের মুখে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) নেজাম উদ্দিন পদত্যাগপত্রে সই করেন।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে আদালত ভবনে চট্টগ্রাম মহানগর পিপির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর তার অনুসারীরা হামলা করে। ওই ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা এক মামলায় সোমবার দুই আসামির পক্ষে জামিনের জন্য আদালতে ওকালতনামা দাখিল করেন এপিপি নেজাম উদ্দিন। আসামিরা হলেন- মো. নুরু ও মো. দেলোয়ার।

এ ঘটনা জানাজানির পর আদালতে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া এবং ওকালতনামা দাখিলকারী এপিপি নেজাম উদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল শুরু করেন। এক পর্যায়ে মহানগর পিপির কার্যালয়ে এপিপি নেজামকে অবরুদ্ধ করে একটি সাদা কাগজে তার পদত্যাগপত্রে সই নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে এপিপি নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের দায়ের করা মামলা, আসামি দু’জন মুসলিম। তাদের একজন যুবদলের রাজনীতি করে। জামিন আবেদনের জন্য তাদের লোকজন আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু ইসকনের সন্ত্রাসীদের ঘটনা জানার পর আমি তাদের না করে দিই। পরবর্তী সময়ে আমার চেম্বারের একজন জুনিয়র নারী আইনজীবী না বুঝে তাদের পক্ষে আদালতে আমার ওকালতনামা দাখিল করে দেন। বিষয়টি আমি জানতামও না।’

বিজ্ঞাপন

‘এ ঘটনা জানার পর আমার সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা আমাকে ঘিরে ধরে পদত্যাগপত্রে সই করতে বাধ্য করেছেন। যে ঘটনায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, আমার কোনো দোষ নেই। তারপরও আমাকে দায়ী করা হচ্ছে। তারা চাচ্ছে, আমি যেন রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন না করি। জোর করে সাদা কাগজে আমার সই নিয়েছে। এভাবে তো পদত্যাগ হয় না,’– বলেন এপিপি নেজাম উদ্দিন।

মহানগর পিপি ও এপিপি’র পদত্যাগ দাবিতে মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। ছবি: সারাবাংলা

মহানগর পিপি ও এপিপি’র পদত্যাগ দাবিতে মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। ছবি: সারাবাংলা

নিয়ম অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র চট্টগ্রাম মহানগর পিপির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের দফতরে যাবে। এর পর সিদ্ধান্ত হবে। তবে পদত্যাগপত্রটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়ার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের পর আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম, সেদিনের ঘটনা নিয়ে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় আসামিপক্ষে আমাদের কোনো আইনজীবী যেন অংশ না নেয়। কিন্তু আইনজীবী নেজাম উদ্দিন সেটা উপেক্ষা করে দু’জন আসামির পক্ষে জামিন শুনানির জন্য ওকালতনামা জমা দেন। এটা ‍উনি ঠিক করেননি। এটা জানতে পেরে আমাদের সাধারণ আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।’

‘নেজাম উদ্দিন আবার অ্যাডিশনাল পিপি। ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তার কাছ থেকে একটি পদত্যাগপত্রে সই নেন। পদত্যাগপত্রটি মহানগর পিপির কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানোর কথা। পাঠানো হয়েছে কি না আমরা জানি না। তবে সমিতির অবস্থান হচ্ছে, আইনজীবী নেজাম উদ্দিন কাজটি সঠিক করেননি,’– বলেন নাজিম উদ্দিন।

আইনজীবীদের একটি সূত্রে জানা গেছে, এপিপি নেজাম উদ্দিনের পদত্যাগ নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের একটি অংশ বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামির জামিনের জন্য ওকালতনামা দাখিল নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে বিরোধ হয়েছিল। আইনজীবীরা মিছিল করেছেন, কাকে যেন সেখানে দালাল সম্বোধনও করেছেন শুনেছি। এরপর অ্যাডিশনাল পিপির কাছ থেকে পদত্যাগপত্রও নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এটা আইনজীবীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ঘণ্টাখানেক পর আবার উনারা নিজেরা ঠিক হয়ে গেছেন।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আসামির পক্ষ এপিপি ওকালতনামা টপ নিউজ পদত্যাগে বাধ্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর