Monday 02 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থার্ড টার্মিনাল চালু হতে আরও এক বছর, আসছে বিমানেরও শ্বেতপত্র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৩ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৩৭

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু করতে আরো এক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা হাসান আরিফ।

হাসান আরিফ বলেছেন, এই টার্মিনাল নির্মানে এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার কোটি খরচ হয়েছে। একটি কি-নোট পেপারে দেখলাম দূর্নীতি না হলে এত টাকা খরচ হওয়া কথা না। নিশ্চয়ই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। এসময় তিনি বলেন, অন্য খাতগুলোর মতো বিমানেরও শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২ ডিসেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘তৃতীয় টার্মিনাল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বিমান উপদেষ্টা। এসময় বিমানের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বৈঠকে অংশ নেওয়া অতিথিরা।

উপদেষ্টা বলেন, বিমানের সক্ষমতার ঘাটতি হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় উপদেষ্টা জানান, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে আরও এক বছর লাগবে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এটিজেএফবির সভাপতি তানজীম আনোয়ার।

আলোচকদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিমানের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর মতো সক্ষমতা আছে কি নেই, এটা প্রাথমিকভাবে পারসেপশনের একটি বিষয়। কারণ, বিমানের এতো দিন যে সার্ভিস আমরা পেয়ে আসছি সেটা সন্তোষজনক না।
বিমানের টিকিট পাওয়া নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, একটি পরিচিত অভিযোগ হলো, আমি টিকিট পাই না কিন্তু বিমানে উঠে দেখি পুরো বিমান ফাঁকা। বিমান যেহেতু এখন আমার দায়িত্বে, সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, আমি এগুলো যাচাই করতেও যাই। আমাকে আপনার মুভিং কন্ট্রোল রুম বলতে পারেন। যদি বিমানের সক্ষমতার অভাব হয়, সেটার বিকল্প পদ্ধতির জন্য ব্যবস্থা করবো।

বিজ্ঞাপন

সব কিছুতেই সংস্কারের একটি বিষয় আসছে। দুদকও সংস্কার করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিষয় যেটি বিগত সরকারের ১৭ বছরে ঘটেছে, সেগুলোর শেত্বপত্র আসছে। বিমানেরও শেত্বপত্র আসবে বলে উল্লেখ করেন বিমান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শেত্বপত্র মানে শুধু অভিযোগই আনা না, এটি আত্মশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।

গোল টেবিল বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য বেবিচক কাজ করছে। এসব টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সাথে আমাদের কথা হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে একটা স্বপ্ন। তবে এজন্য বেবিচক কাজ করে যাচ্ছেন।

বৈঠকে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এবং টার্মিনাল-২-এ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। বিমানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার নিশ্চিত করার তাগিদ জানিয়েছেন তারা।

বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এভিয়েশন অপারেটর’স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে যেন রাজনীতির উপর অপারেশনাল বিষয় প্রাধান্য পায় তার জোর দাবি রাখব।

তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা এবং টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্তৃত্তবাদ ভেঙ্গে একাধিক কোম্পানিকে দেয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয়, বরঞ্চ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার কর্তৃত্তবাদ ভাঙ্গা সম্ভব হলে চূড়ান্ত বিচারে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আর অন্য অপারেটরের সাথে যোগ্য বিবেচিত হলে বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে দেশ এবং জনগণ একধারে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং উন্নত সেবা পাবে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তথা তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সময় বিবেচনা করা হয়নি। এমন অপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য ৫৪ বছরেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অর্জন শূন্য। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও কোন একটি সংস্থা একক ভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে না। সেখানে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে। সেবা বিষয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে তা বলা যায় না।

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের জিএসএ রিদম গ্রুপের হেড অব বিজনেস মাসুদুজ্জামান বলেন, বিমান বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করুক। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো তাদের কাজের প্রক্রিয়া দীর্ঘ। বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগে বিমান থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার অনুমতি নিতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে ৪ মাসে বেশি সময় ঘুরতে হয়েছে। এ টার্মিনালটি বিশ্বের অন্যতম বড় ও আধুনিক। কিন্তু এখন যারা শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ব্যবস্থাপনা করছে, তাদের দিয়ে আদও তা ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে কিনা তা পর্যালোচনা জরুরী।

এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটির ঢাকার (এওসি) চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যেসব অভিযোগ শুনেছি এখনো একই ধরনের অভিযোগ আসছে। এই বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইন্স বাড়ছে। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং এর সেবার মান বাড়ছে না।

সারাবাংলা/জেআর/এনজে

থার্ড টার্মিনাল বাংলাদেশ বিমান শ্বেতপত্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর