জাতীয় সংলাপের আহ্বান গণঅধিকার পরিষদের
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬ | আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪২
ঢাকা: সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ আয়োজনের আহ্বান গণঅধিকার পরিষদের। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েনের কথা বলেছেন এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন।
অথচ গত ২৮ নভেম্বর বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামের একটি সংগঠন ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। এমনকি সীমান্ত অবরোধের হুমকিসহ বাংলাদেশি সীমান্তে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে একেরপর এক বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ঘৃণা প্রচার চলছে। এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন প্রতিবাদ নেই। বরং বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন।
সম্মেলনে বলা হয়, কলকাতা উপ-হাইকমিশনে নিরাপত্তা প্রদান না করে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উপহাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রদানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ও কলকাতায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত কলকাতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও জাতিসংঘে সেই প্রস্তাব করার আহ্বান করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ভারতের গণমাধ্যমে বিজেপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাসহ নানা ইস্যুতে গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ভাল আছে। এখানে কোন ধর্মীয় বাকবিতণ্ডা ও সাম্প্রদায়িকতা নেই। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধা বজায় রেখে জীবনযাপন করছে।
গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ‘ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা’-এর পরিচালিত জরিপেও বলা হয়েছে, আওয়ামীলীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের পর জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর তার ভক্ত ও অনুসারী ইসকন সদস্যরা চট্টগ্রামের আদালতে অবস্থিত মসজিদে হামলা করে এবং সরকারি
সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড অব ইন্ডিয়াসহ একাধিক গণমাধ্যমে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার এসব কর্মকাণ্ড মিথ্যাচার ও নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করেছে।
সর্বশেষ গতকাল ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনে হামলা বিজেপি সরকারের অপতৎপরতার ও বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ। এই হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি। ভারতের এসব কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় আওয়ামীলীগ নিজেদের বিদায় ও পরাজয় মেনে নিতে পারলেও, স্বৈরাচার হাসিনার বিদায় ভারত মানতে পারছেনা। কারণ এই দেশের বীর ছাত্র-জনতা ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৫ বছরে ধরে গড়ে ওঠা হাসিনার মসনদ ভেঙে খানখান করে দিয়েছে। যেকারণে ভারত একেরপর এক ষড়যন্ত্র করছে এবং ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কোনধরনের উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য্য ও সহনশীলতারসহিত সবকিছু মোকাবিলা করছে।
আইনজীবী সাইফুল ইসলামের নির্মম হত্যাকাণ্ড ও মসজিদে হামলার পরেও কোন হিন্দুর বাড়িতে ও মন্দিরে হামলা হয়নি, বরং নিরাপত্তা বলয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত মনে করেছিলো, ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিবে বাংলাদেশের জনগণ। এরপর ভারত বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষেত্র খুঁজে পাবে। কিন্তু জনগণের বিচক্ষণতার কাছে ভারতের ষড়যন্ত্রের পরাজয় হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটি নয়। বাংলাদেশের ভিতরেও নানা ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। সিন্ডিকেট ও বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসা, গণহত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে না পারা, শেখ পরিবারকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা, পুলিশ -প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের সকল স্তরে আওয়ামী সুবিধাভোগীদের দ্বারা ষড়যন্ত্র ও রদবদলের নামে তাদের পুনর্বাসন করা, বিচারের আগে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে না পারা, আনসার ক্যু, বিচারবিভাগীয় ক্যু, নানাবেশে আওয়ামীলীগের ফিরে আসা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, নানা গোষ্ঠীর একেরপর এক আন্দোলন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের বোঝাপড়ার ঘাটতি, এখনো পর্যন্ত শহীদ পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে না পারা, আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার বিষয়ে অসন্তুষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে না পারা, বিপ্লবের সকল অংশীজনদের নিয়ে ঐক্য ও সংহতির জাতীয় সরকার গঠন না করার ব্যর্থতা, উপদেষ্টাদের নানামুখী রাজনৈতিক বক্তব্য ও পৃষ্ঠপোষকতা ইত্যাদির কারণে সংকট প্রকৃট আকার ধারণ করেছে।
কিন্তু এখনো সুযোগ আছে নতুন বাংলাদেশ বির্নিমান করার। একেরপর এক দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সেই স্বপ্ন বিনষ্ট করতে পারে। এমতাবস্থায় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। কিন্তু জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তি কি হবে এখনো পর্যন্ত আমরা সেটি নির্ধারণ করতে পারিনি। শুধু চটকদার মৌখিক বক্তব্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হতে পারেনা। এজন্য সরকারের তরফ থেকে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করার আহ্বান জানাচ্ছে গণঅধিকার পরিষদ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সারা বাংলা/এ এইচ এইচ/এনজে