Tuesday 03 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু প্রকল্পের মাঝ পথে পরামর্শক ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৯ | আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:১৬

ঢাকা : চলমান প্রকল্পের মাঝ পথে পরামর্শক ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। ‘উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবনাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মূল প্রস্তাবে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এখন ৪ কোটি ১৬ লাখ ৭ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি মেয়াদ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত (সচিব) মো.আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, সভায় পরামর্শক ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এরপর সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এখন
সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় পাঠানো হলে অনুমোদনের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

পিইসি সভা সূত্রে জানায়, সংশোধনী প্রস্তাবে প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয় বাবদ ৪ কোটি ১৬ লাখ ৭ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজনে পরামর্শকের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের প্রস্তাবিত সকল অঙ্গের একক এবং পরিমাণ যথাযথভাবে প্রস্তাবিত ডিপিপিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার ৮৩ দশমিক ৯৫ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল এবং প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে টাকার বিনিময় হার ১১০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় টাকার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় কতো বাড়ছে- সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে পিইসি সভায়।

সূত্র জানায়, এছাড়া প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে উপকারভোগীর সংখ্যাসহ ভাতা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের সংখ্যা বাড়ার ভিত্তি কী এবং ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে
অর্থ বিভাগের সম্মতি আছে কি না- সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি নিম্নভূমি ডেল্টা অঞ্চল, যার ভৌগলিক অবস্থান এবং জলবায়ু-ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে দূর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র-মেঘনা নদীর মোট অববাহিকা এলাকার মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও, এই অববাহিকায় সৃষ্ট ৯৩ শতাংশ বৃষ্টিপাতের প্রবাহ চার মাসের মধ্যে নিস্কাশন করতে হয়। দেশটির সমতল ভৌগলিক অবস্থান, যেখানে বেশিরভাগ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটারের নিচে অবস্থিত, যা এটিকে বন্যা, ক্রান্তিয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং খরার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা বিশেষভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ এবং বাড়তি লবণাক্ততার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । এই অঞ্চলে ৩৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মানুষের বসবাস এবং তারা মিঠা পানির সংকট ও কৃষি জীবিকার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তন এই ঝুঁকিগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা, বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলো বাড়তি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আন্ত:সরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (আইপিসিসি) পূর্বভাস দিয়েছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ২৭ মিলিয়ন উপকুলীয় মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব লিঙ্গ নিরপেক্ষ নয়, কারণ নারী ও কিশোরীদের প্রায়ই তাদের সামাজিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সীমিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং আর্থিক ক্ষেত্রে প্রবেশের সীমাবদ্ধতার কারণে আরও কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হয়।

সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর স্থায়িত্বশীল জীবন-জীবিকা এবং পানিয় জলের সমাধানের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পটি হাতে নেয়। যৌথভাবে প্রকল্পটিকে অর্থায়ন করছে সবুজ জলবায়ু তহবিল, (গ্রীণ ক্লাইমেট ফান্ড) ও বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি ৮৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এরমধ্যে সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে ২০৯ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মোট উপকারভোগগীর সংখ্যা আনুমানিক ৭ লাখ ১৯ হাজার ২৯২ জন।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

জলবায়ুু প্রকল্প পরামর্শক ব্যয় বৃদ্ধি

বিজ্ঞাপন

আরও ২ সচিব ওএসডি, পদায়ন ২ জনের
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর