২০২৩ সালে খানাগুলো গড়ে ৫৬৮০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২২ | আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:১৫
ঢাকা: ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে খানাগুলো গড়ে ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে বিচারিক ও ভূমি সেবা এবং ব্যাংকিং খাতে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত ‘সেবাখাতে দুর্নীতি জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিচারিক সেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দুর্নীতি ও ঘুষের উচ্চ হার অব্যাহত ছিল। ফলে সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধার শিকার হয়। অন্যদিকে, ভূমি সেবা, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এবং বিআরটিএ’র মতো সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান। যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কালিত মোট ঘুষ/নিয়ম বহির্ভুত অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ দশমিক ৩ কোটি টাকা। জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কালিত মোট ঘুষের পরিমাণ ২০০৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপির শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ ও জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ (এপ্রিল) পর্যন্ত সেবা খাতে আদায়কৃত প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
সংস্থাটির জরিপে ২০২৩ সালে জাতীয়ভাব প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ খাতওয়ারি হিসাবে তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ভূমি খাতে ১০ হাজার ৯০২ দশমিক ৩ কোটি টাকা, বিচারিক সেবা ২ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ২ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৬ কোটি টাকা, পাসপোর্ট খাতে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, বিআরটিএ খাতে ৬৭৫ দশমিক ১ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাতে ৩০৯ দশমিক ৬ কোটি টাকা।
এছাড়া, স্বাস্থ্য (সরকারি) খাতে ২৩৫ দশমিক ১ কোটি টাকা, শিক্ষায় (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) ২১৩ দশমিক ৯ কোটি টাকা, ব্যাংকিং খাতে ১২৮ দশমিক ৭ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৭৬ দশমিক ৪ কোটি টাকা, এনজিও (প্রধানত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ) ২৯ দশমিক ৯ কোটি টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুযোগ সহায়তায় ২৩ দশমিক ৩ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (গ্যাস, বিমা, কর ও শুল্ক, এমএফএস, এনআইডি) খাতে ৫৭৮ দশমিক ৪ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
জরিপে বলা হয়, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা এবং ঘুষের শিকার ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ খানা। সর্বোচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষের হার পাসপোর্ট, বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার। সেবা নিতে গিয়ে নিম্ন আয়ের খানা তাদের বার্ষিক আয়ের অপেক্ষাকৃত বেশি অংশ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ছয়টি খানা জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১০, ২০১২, ২০১৫, ২০১৭, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে এই ছয়টি বছরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত মোট ঘুষের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মধ্যবর্তী বছরগুলোর ঘুষের পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছে। পাইথন সফটওয়্যারের পান্ডাস লাইব্রেরি ব্যবহার করে লিনিয়ার ইন্টারপোলেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে এই সময়কালের প্রদত্ত মোট ঘুষের পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
জরিপে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন অধ্যাপক সেকান্দার হায়াত খান, পিকে. মো. মতিউর রহমান, মোহাম্মদ শোয়ায়েব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন, ইকোনোমিক রিসার্চ গ্রুপের অর্থনীতিবিদ ও সদস্য এ কে এনামুল হক।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম