১৩ বছর আগের রাবি প্রশাসন ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাংবাদিকের ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ছয় নেতা ও তৎকালীন প্রশাসনের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় এক ভুক্তভোগীর ভাই আদালতে মামলাটি করেছেন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজশাহী আদালতে ভুক্তভোগী সরদার হাসান ইলিয়াস তানিমের ভাই রোকনুজ্জামান মামলাটি দায়ের করেন। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে ওই ঘটনায় জড়িত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে মামলার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
১৩ বছর পর করা এই মামলায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে তৎকালীন রাবি প্রক্টর ও পরে উপউপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক তারেক নূর ও অধ্যাপক মুস্তাক আহমেদসহ ছাত্রলীগের সাবেক ছয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী সরদার হাসান ইলিয়াস তানিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই সময় তিনি দৈনিক লাল গোলাপ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও পরে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল কমিটির সদস্য ছিলেন হাসান ইলিয়াস।
মামলার আসামি ও সাংবাদিক হাসান ইলিয়াসের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলেন— ওই সময়কার রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী (৪২), রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হোসাইন বিপু (৩৭), একই কমিটির সহসভাপতি ও বর্তমান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য -গবেষণা সম্পাদক আল আরাফাত রাব্বি (৩৪), মাদার বখশ হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রুহুল আমিন বাবু (৩৮), ছাত্রলীগ কর্মী ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৩-০৪ সেশনের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম (৩৫) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের কামাল হোসেন (৩৫)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোকনুজ্জামান বলেন, ‘সাংবাদিক হাসান ইলিয়াস ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের স্টোর রুম থেকে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে। এ সময় ছাত্রলীগের দলীয় সন্ত্রাসী রুহুল আমিন বাবু হকি স্টিক দিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন। পরে ইট দিয়ে তার মাথা ও মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। সৈয়দ আমীর আলী হলের সামনে থাকা পানির কুয়ার মধ্যে ফেলে চুবিয়ে তাকে ধরে রাখেন।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘পানি থেকে ওঠানোর পর আব্দুল আলীম, আল আরাফাত রাব্বি ও আহম্মদ আলী মোল্লা জিআই পাইপ এবং আবু হোসাইন বিপু রড দিয়ে তার পিঠ, কোমর ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ও হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন আসামি কামাল হোসেন ও আহম্মদ আলী মোল্লা।’
লিখিত বক্তব্যে রোকনুজ্জামান আরও বলেন, ‘হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও পরে উপউপাচার্ডের দায়িত্ব পালন করা চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর তারেক নূর ও সাবেক সহকারী প্রক্টর মুস্তাক আহমেদ। ভুক্তভোগী নিজেকে রক্ষার জন্য কাকুতি-মিনতি করলেও তারা তাকে রক্ষা না করে উলটো তার ওপর হামলা করার জন্য ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে হাসান ইলিয়াস জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।’
অভিযোগের বিষয়ে তৎকালীন সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, ‘আমার দায়িত্ব পালনের সময় এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। আমি আমার দায়িত্ব পালনে কোনো রাজনৈতিক দলকে এমন সম্মতি দেইনি।’
অভিযোগের বিষয়ে তৎকালীন প্রক্টর ও উপউপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মামলার বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘মামলার কপি এখনো আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। মামলার কপি হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেব।’
সারাবাংলা/টিআর