নিউজিল্যান্ডে মাওরি জাতির ঐতিহাসিক প্রতিবাদ: নেতৃত্ব দিলেন কাপা-কিঙ্গি
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৪৯ | আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮
নিউজিল্যান্ডের মাওরি অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইরু কাপা-কিঙ্গি সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এই সাফল্যের জন্য নিজের কৃতিত্ব নিতে তিনি অনিচ্ছুক।
‘আমরা কেবল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছি, আর হাজার হাজার মানুষ সেই দরজা দিয়ে এগিয়ে এসেছে’, দ্য গার্ডিয়ানের এক সাক্ষাৎকারে এমনটি বলেন ২৮ বছর বয়সী এই আইনবিদ এবং সমাজকর্মী।
৯ দিনের এই হিকোই (প্রতিবাদ মিছিল) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো মানুষকে একত্রিত করে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। পুলিশি হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্টে পৌঁছানোর সময় মিছিলে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
কাপা-কিঙ্গি বলেন, ‘এই মিছিলে আমরা বিভিন্ন প্রজন্মের, বিভিন্ন পেশার মানুষকে একত্রে কাজ করতে দেখেছি। ঐক্য এবং লক্ষ্যের সঙ্গে তারা এগিয়ে এসেছে। এটি ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর বিষয়।’
কাপা-কিঙ্গি বর্তমানে টোইতু তে তিরিতি আন্দোলনের প্রধান নেতা। এই আন্দোলন মাওরি অধিকারের জন্য কাজ করছে এবং বিশেষ করে বিতর্কিত ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিল’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান নিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা দলিল ট্রিটি অব ওয়াইটাঙ্গি, যা ১৮৪০ সালে ব্রিটিশ ক্রাউন এবং মাওরি নেতাদের মধ্যে সই হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা বদলে দেওয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে এই বিলটি এসেছে। এই বিলটি মাওরি অধিকারের ওপর হুমকি বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছে। যদিও এটি আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে এর প্রস্তাবনা মাওরি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
হিকোইয়ের সময়, পার্লামেন্টের সামনে হাজার হাজার মানুষের এই বিশাল উপস্থিতি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং মাওরি জাতি হিসেবে তাদের পরিচয় এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাকে নির্দেশ করে।
কাপা-কিঙ্গি এবং তার মতো অন্যান্য যুব নেতারা মাওরি অধিকারের আলোচনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের গল্প অন্যরা বলেছে এবং বিকৃত করেছে। এখন আমরা আমাদের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছি এবং সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
এই আন্দোলন এখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বৃহৎ আন্দোলন এবং এটি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা জানান কাপা-কিঙ্গি।
উল্লেখ্য, মাওরি জাতি হলো নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা পলিনেশিয়ান বংশোদ্ভূত। তারা ১৩০০ শতাব্দীর দিকে নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন করে। মাওরি সংস্কৃতি নিউজিল্যান্ডের জাতীয় পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের ঐতিহ্যবাহী হাকা নৃত্য, কারুকাজ, এবং গল্প বলার ধারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
সারাবাংলা/এনজে