‘সংবাদ বা নিউজ কন্টেন্ট চুরি হলে আর্থিক জরিমানা’
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৪৭
ঢাকা: দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ, নিউজ কন্টেন্ট অসদুপায়ে কপি-পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ বন্ধের জন্য আর্থিক জরিমানা করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নতুন বাংলাদেশ: কেমন গণমাধ্যম চাই?— শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে দুইটা সমস্যা হচ্ছে ‘
তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি সংবাদপত্র, টিভি মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়াসহ অরিজিনাল কন্টেন্ট বানানোর জন্য অনেক টাকা খরচ করছে। সেই কন্টেন্ট আরেকজন কপি-পেস্ট করে নিয়ে যাচ্ছে এক সেকেন্ডে। কারণ আমাদের দেশের কপিরাইট আইন খুবই দুর্বল। একটা নিউজের পেছনে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরে আরেকজন কোনো কিছু না করেই নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। তার এক টাকাও খরচ হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা অরিজিনাল কন্টেন্ট তৈরি করবেন তাকে তো আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। অন্য কেউ যেন আরেকজনের কন্টেন্ট বা নিউজ চুরি করতে না পারে। কেউ হয়তো ছয়জন রিপোর্টারকে দিয়ে একটা নিউজ করালেন কিন্তু ঢাকা চুরি ডট কম সেটা এক মিনিটে নিজের নামে প্রকাশ করে দিলো।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা সংবাদ পত্র চাই, আমরা টিভি স্টেশন চাই, অরিজিনাল কন্টেন্ট চাই। সেক্ষেত্রে যে সাংবাদিক অসম্ভব খাটলো বা যে হাউজ বিনিয়োগ করল তাকেও আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা জায়গায় দেখলাম, একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৫০টা নিউজ প্রকাশ করছে। একটা ওয়েবসাইটে তিনি এই কাজ করায় আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কিভাবে সম্ভব এমনটা? এটাতো পুরোটাই চুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা আসল গণমাধ্যমকে নিরাপত্তা দেবো যেটা পশ্চিমা সোসাইটিতে দেওয়া হয়ে থাকে। সেখানে একটা বাজে নিউজ করে পাড় পাওয়া যায় না। কোথাও ১০ বা ২০ মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হয়। আমার এই জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘যারা ভুক্তভোগী, যাদের নিউজ অন্যরা বিনা পরিশ্রমে করে ফেলছে তাদেরকে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তার সম্মানটা ফিরিয়ে দিতে হবে। টাকাটা বড় কথা না কিন্তু তার সম্মানটা ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকতাকে কঠিন করতে চাই না। কিন্তু যেন নৈতিকতার দিক থেকে সেই কাজটা আমরা করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অসততার সঙ্গে কাজ করে যারা নিউজ বা কন্টেন্ট চুরি করে তাদের জরিমানা করে যদি আমরা আসল কন্টেন্ট বা নিউজের কপিরাইট নিশ্চিত করতে পারি তখন অনেকে হাউজে বিনিয়োগ করবে কন্টেন্ট তৈরির জন্য। কারণ তখন তার অর্থনৈতিক মডেল হবে। আমরা এই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই।’ এটা নতুন বাংলাদেশ। লেটস ট্রাই টু ডু সাক স্মার্ট থিংস— যোগ করেন শফিকুল আলম।
আরেকটি চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের আমরা কিভাবে নিরাপত্তা দেবো?— এই জায়গাটা নিয়ে কোনো আওয়াজ হচ্ছে না। দেখা গেলো কোনো একজনের নামে একটা ভুল সংবাদ প্রকাশিত হলো। পরবর্তীতে জানা গেলো সংবাদটা ভুল। কিন্তু এর মাঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা স্থানে তার বিষয়ে করা সেই ভুল ছড়িয়ে পড়ায় তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হলো। সেক্ষেত্রে সেই সংবাদটা ভুল প্রমাণিত হওয়ার পরে আমরা কি সেই ভুক্তভোগীর সামাজিক অবস্থা ফিরিয়ে দিতে পারবো?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টা বিগত সরকারের আমলেও ছিল। দেখা গেলো কাউকে জঙ্গী বানিয়ে দেওয়া হলো আর তার ছবি প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করা হলো। তখন পুরস্কারের জন্য পুলিশ এই কাজটা করতো। অথচ সেই ব্যক্তি আসলে জঙ্গী ছিলেন না। এক্ষেত্রে আমরা কি তাকে তার সামাজিক অবস্থান ফিরিয়ে দিতে পারবো?’
টিআইবি আয়োজিত এই আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নুরূল কবীর, পিআইবি’র (প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
সারাবাংলা/এসবি/এইচআই