সবজিতে স্বস্তি এলেও মাছ-মাংসের চড়া দর কমছেই না
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:২৫ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে শাকসবজির দামে কিছুটা স্বস্তি মিললেও মাছ-মাংসের চড়া দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সপ্তাহের মাঝখানে সবজির দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। তবে তা আবার কমতির দিকে এসে গেছে।
শাকসবজির দর চট্টগ্রামের একেক কাঁচাবাজারে কিংবা অলিগলিতে ভ্যানে একেকরকম দেখা গেছে। কিন্তু মাছ-মাংসের দর, যাকে চড়া হিসেবে দেখছেন ক্রেতারা, সেটা এখনো গত সপ্তাহের মতোই আছে। চাল, আলু, পেঁয়াজসহ আরও কিছু পণ্যের দামেরও হেরফের হয়নি চলতি সপ্তাহে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলা, টমেটো, দেশি আলুর। নগরীর আসকারদিঘীর পাড়ের গলিতে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ফুলকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মূলার দাম ৫০ টাকার মধ্যে এসেছে। শিমের দাম এখনো ১০০ টাকা।
আবার কাছেই কাজীর দেউড়ি বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, শিম ১৪০ টাকা, দেশি নতুন আলু ১২০ টাকায়। কাজীর দেউড়ি অভিজাতদের বাজার হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে শাকসবজির দাম এ সপ্তাহে তেমন হেরফের হয়নি। এ বাজারে ফুলকপি মানভেদে ৩৫ থেকে ৫৫ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শিম প্রতিকেজি ১০০ টাকা, কাঁকরোল-বরবটি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া লাউ, ঝিঙা, পটল, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, মূলা, পুঁই শাকের বিচি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। লাল শাক, মূলা শাক, পুঁই শাক ও মিষ্টি কুমড়া শাকের দামও কমে ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। বাজারে নতুন আলু ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি বড় আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।
বিক্রেতা জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই দিন আগে শিম, আলু, টমেটো, আরও কয়েকটার দাম ১০-২০ টাকা বেড়েছিল। হঠাৎ সাপ্লাই ছিল না। এখন আবার আগে যা বেচতাম, সে রকম হয়েছে। তবে শিম আর দেশি আলুর দাম এখনো বাড়তি। এটা এবার আড়তে কম আসছে।’
বাজারে ডিমের দাম স্থিতিশীল। খুচরায় প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাস ধরে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর দামেও হেরফের হয়নি।
মাছের মধ্যে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আকারভেদে ইলিশের দাম দেড় হাজার থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে।
এদিকে কাজির দেউড়ি বাজারে রুই-কাতল প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ও চিংড়ি আকারভেদে ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। কাজির দেউড়ি বাজারে মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৯৫০ টাকা ও হাড়সহ ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নগরীর হালিশহর থেকে কাজির দেউড়ি বাজারে আসা ক্রেতা সুলতানা পারভীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাছ-মাংসের দাম বেশি। মাসের পর মাস ধরে সেটা আর কমছে না।’
বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম খুচরায় গত সপ্তাহে কেজিতে ২-৩ টাকা করে বেড়েছিল। চলতি সপ্তাহেও সেই বাড়তি দর অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২১০০ টাকা, বেতি আতপ ৩২৫০ থেকে ৩৩০০ টাকা, হাফ সেদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৮০ থেকে ১৭৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও মিশরের পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে খুচরায়। এ ছাড়া দেশি রসুন ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই কেজি প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা ও ময়দা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর