ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভালো নেই জাতীয় পার্টি। হামলা-মামলার ভয়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম বলতে গেলে স্থগিত হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও চলে গেছেন আত্মগোপনে। কেউ আবার নিজের গাড়িতে যাতায়াত না করে অন্যের গাড়ি ব্যবহার করছেন। তবে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত জাপার বনানী কার্যালয়ে যাওয়া-আসা করছেন। দলটির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসে এবং খুলনা মহানগর জাপা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর থেকে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, দলটির অতিরিক্ত মহাসচিবদের দলীয় কার্যক্রমের জন্য আটটি বিভাগে এবং জেলা শহরে সফর করার কথা ছিল। যেখানে দলীয় বর্ধিতসভার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী খোঁজারও পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু জেলা সফরে বের হলেই মামলা-হামলায় জড়িয়ে পড়ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সেজন্য আপাতত দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা। তবে এ দুই কর্মসূচি পালনে হামলা হতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে তাদের।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের শীর্ষ ও অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ বৈঠকে আপাতত দৃশ্যমান সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মিছিল বের করলে হামলা-মামলার শিকার হতো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মিলে জাপার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাতো। কথিত রয়েছে যে, ওই সময়ে রাজধানীর সায়েদাবাদে জাপার একটি সমাবেশে দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী হামলার ভয়ে ম্যানহোলে ডুবে ছিলেন। তবে সেদিনের জাপার রাজনীতি পরিস্থিতি এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নয়। ওই সময় জাপার দুর্দিন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু উপেক্ষা করে দলের বর্তমান নেতাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মীরা। তা না হলে জাপার রাজনৈতিক অবস্থান তলানিতে নামবে। নেতাকর্মীদের মতে, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলছুট অন্যান্য নেতাদের এই মুহূর্তে কাছে টানা দরকার।
খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মধু সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবেই সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোন নির্দেশনা পাচ্ছি না। এছাড়া, বর্তমানে দেশের উদ্ভট পরিস্থিতিতে মামলা-হামলার ভয়ে নেতাকর্মীরা মাঠে নামছেন না। খুলনা জাপা অফিসে হামলা হয়েছে। পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। এসব কারণে নেতাকর্মীরা তৎপর নয়। তবে কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মাঠে নামতে পারবে খুলনা জাপা।’
এসব বিষয়ে কথা হয় দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অফিশিয়ালী সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করব, আর কী করব না- সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। শিগগিরই দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে জাতীয় পার্টি মাঠে নামবে।’
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জাতীয় পার্টি সংসদে কথা বলতে পারেনি। ভয়-ভীতি দেখিয়ে সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করতো। তারপরও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে দাঁড়িয়ে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন। এছাড়া সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তারা। তারপরও আমাদের দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের , ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহামুদসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতারা মাঠে নামলে হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশে এ ধরনের হামলা-মামলা দুঃখজনক।’
ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখনো হচ্ছে। রাজনীতি করলে মামলা-হামলা হবে- এটাই স্বাভাবিক। তারপরও জনগণের পক্ষে কথা বলতে হলে সবকিছু উপেক্ষা করে মাঠে নামতে হবে। যেমনটি ১৯৯০ সালের পর প্রয়াত মিজানুর রহমান চৌধুরী করেছিলেন। আর এ কারণেই ওই বছর নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাপা ৩৫টি আসনে জয়লাভ করেছিল।’