বিচারকের সই জাল করে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা আত্নসাৎ
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৫৩ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:০৪
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ আদালতের বিচারকের সই জাল করে ভুয়া পেমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারের ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ ওই আদালতের হিসাব সহকারী ইমরান নাজিরের বিরুদ্ধে। জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পরই তিনি দুবাই পালিয়েছেন।
এ ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা বাদী দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সুজন শিকদার। সিনিয়র স্পেশাল আদালতে মামলা হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।
মামলায় আসামি করা হয়েছে জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের ডিএএফও (ডিস্ট্রিক এ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার) মো.নজরুল ইসলাম, সুপার দেওয়ান ফেরদৌস ওয়াহিদ, মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ছয় সদস্য ও ইমরান নাজিরের আত্নীয়-স্বজনসহ ২১ জনকে।
এঘটনা কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে হিসাব সহকারী ইমরান নাজিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার ধোকরাকোল গ্রামের মৃত নাজমুস সাহাদতের ছেলে। ২০১৮ সালে তিনি মানিকগঞ্জ জজকোর্টে চাকরি শুরু করেন।
গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে জালিয়াতি চলে আসলেও বিষয়টি ধরা পড়ে চলতি বছরের নভেম্বরে। এতে যোগসাজশের অভিযোগ উঠে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা ও সুপারের বিরুদ্ধেও।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত বরখাস্তকৃত ইমরান নাজির মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত বিচারকদের সই জাল করে প্রিয়ামশনসহ চলমান ও নিষ্পত্তিকৃত বিভিন্ন মামলার ভুয়া পেমেন্ট অর্ডার তৈরি করে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ চক্রে ৬ নারীসহ জড়িত রয়েছে স্ত্রীর ভাই, আপন ফুপা, ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, ৬ আইনজীবী। শুধু ৬ আইনজীবীর ব্যাংক হিসাবে সরকারি কোষাগারের ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাচার হয়েছে।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, আদালতের হিসাব শাখায় রক্ষিত বিভিন্ন রেজিস্ট্রারের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসামি ইমরান মামলার বিপরীতে প্রদর্শিত অর্থের পরিমান ঘষামাজা করে ইচ্ছে মাফিক টাকার অংক বসিয়ে সই জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করে নেন।
চলমান মামলা থেকেও বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজসে বিচারকসহ সংশ্লিস্টদের সই জাল করে চালান, পেমেন্ট অর্ডার ও অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে আত্মসাত করেন।
বিচারকের সই জাল করে টাকা আত্নসাত হওয়ার বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় ইমরান দুবাইতে চলে যান বলে জানান তার স্ত্রী আফিফা। তিনি বলেন, আমি ইমরানের অপকর্মের দায় কেন নেব? তার টাকা আমার কল্যাণে আসেনি।
দুদকের মানিকগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আজিজ উল্লাহ বলেন, আমার প্রায় ৫০ বছর আইন পেশায় কখনো শুনিনি কোর্টের টাকা আত্মসাৎ করা যায়। ঘটনাটি পুরো বিচার বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে।
জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নূরতাজ আলম বাহার বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যেসব আইনজীবীর নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে বারের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
মামলার আইনজীবী সামিউল মাহমুদ রাকিব জানান, দুর্নীতি দমন আইন, মানিলন্ডারিং ও দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন।
মামলার বাদী সুজন শিকদার জানান, মামলাটি তদন্তের জন্য স্পেশাল জজ আদালত থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এসআর