প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় মহিউদ্দিন পরিবারের ‘দখলমুক্ত’ করতে চায় চসিক
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পরিবারের ‘দখল’ থেকে বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের উদ্যেগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের পদ থেকে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন পদত্যাগ করার পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছ থেকে এ আগ্রহের কথা এসেছে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সভায় একথা জানান মেয়র। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
জানা গেছে, সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুন কাউকে উপাচার্য পদে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মেয়র শাহাদাত হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছে কমিটি।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভা থেকে মেয়র স্যারকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে মেয়র মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সার্বিক সিদ্ধান্ত জানাতে সোমবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের মালিকানায় আছে। তার সন্তান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়টি বেআইনি ও অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ তুলে গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
একই চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সিটি করপোরেশনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মহিউদ্দিন পরিবারের আইনি বিরোধ আছে।
এদিকে, রোববার চসিকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চসিকের টাকায় এবং জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৩ সালেও চসিকের নিজস্ব ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমি কেনা হয়েছে। তাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চসিকের সম্পত্তি, চট্টগ্রামের জনগণের সম্পত্তি। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও তাদের সুন্দর শিক্ষাজীবন নিশ্চিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চসিকের অধীনে পরিচালিত হবে।’
‘কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দখল করা হয়েছে। এজন্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে দখলমুক্ত করতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি, ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়কে অবহিত করেছি, আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়াতেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চসিকের নিয়ন্ত্রণে ফিরবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোনো মেয়র বা প্রভাবশালী যাতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে জবরদখল না করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা চাই প্রথমে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে চসিকের আওতাভুক্ত করে এরপর পর্যায়ক্রমে সংস্কারের কাজ পরিচালনা করব।’
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ইউনিভার্সিটির মূল যে তিন জন ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর পদত্যাগ করেছে, এতে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এর প্রপার্টিগুলো চসিকের টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। এখানে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এটা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে সে প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনা করে আমরা আজ সভা আহবান করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চসিকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তৎকালীন মেয়র এটার দায়িত্বে ছিলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এটার সম্পত্তি কেনা থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনা কিন্তু চসিকের মাধ্যমে হয়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটা চসিক পরিচালনা করেছে। এরপরে যাই হোক এটা দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। এটা অন্য একটি কর্তৃপক্ষ জোর করে দখল করে নিয়েছিল।’
‘আমরা সিটি করপোরেশন থেকে সরকার বরাবর আবেদন জানিয়েছি। মেয়র মহোদয় এ বিষয়টা অবহিত আছেন এবং তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এরই মধ্যে এটা ট্রান্সমিট করেছেন। এটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার, হয়তো সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে। এ প্রপার্টিটা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে আবার ফেরত আসছে।’
এ সময় চসিকের সচিব আশরাফুল আমিন, আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন, নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন, ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বিঞ্চু কুমার সরকার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, বিটিসিএলের মুখ্য মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ দাশ, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক মুহম্মদ আশিফ ইমরোজ, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জামিউল হিকমা, সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন, পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম