Wednesday 11 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি
১০ মাসে ২৫৪৪ কোটি টাকা কমলেও ‘নেতিবাচক’ নয়

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৩৮ | আপডেট: ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৫৮

অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টস (ওটেক্সা)

ঢাকা: চলতি বছরের ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যেখানে ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, সেখানে চলতি বছর এর পরিমাণ ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পোশাক রফতানি কমেছে ২১২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে ২১ দশমিক ২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি কম হয়েছে, টাকার অংকে যা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা (১ ডলার ১২০ টাকা ধরে)। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টসের (ওটেক্সা) এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ওটেক্সার তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে সারাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে পোশাক আমদানি করেছিল ৬৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে আমদানি করেছে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। দুয়েকটি দেশ বাদে প্রায় সব দেশেরই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমেছে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে এই রফতানিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। তাদের ভাষ্য মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ ও বন্যার মধ্যে যে পোশাক রফতানি হয়েছে তা মোটেও কম নয়।

বিজ্ঞাপন

তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক চীনের পোশাক রফতানি কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীন যেখানে রফতানি করেছিল ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক, সেখানে চলতি বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার। তবে পোশাক রফতানিতে প্রায় বাংলাদেশকে টেক্কা দিতে থাকা ভিয়েতনামের পোশাক রফতানি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে ভিয়েতনাম যেখানে ১২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছিল, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পোশাক রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

তথ্য সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রফতানি কমেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মেক্সিকোর ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও কোরিয়ার ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ১০ মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে ভিয়তনামের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ভারতের ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ ও পাকিস্তানের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এর আগে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেও (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে যেখানে এই সময়ে দেশটিতে পোশাক রফতানি হয়েছিল ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের, সেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। তবে পরের বছর ২০২৩ সালে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান সারবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের ১০ মাসে যে পোশাক রফতানি কমেছে, এটিকে আমি কমা বলব না। এই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মাসে পোশাক রফতানি কমেছে, কোনো মাসে বেড়েছে। এমন একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে যে রফতানি হয়েছে, সেটিকে ভালোই বলা যায়। এই বছর বন্যা হয়েছে, অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল না। অনেক কারখানা বন্ধ ছিল, অনেক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ছিল। এর মধ্যেও আমরা খুব সাহসিকতার সঙ্গে রফতানি ধরে রাখতে পেরেছি, হয়তো প্রবৃদ্ধি করতে পারিনি। এটিকে নেগেটিভভাবে নেওয়ার কিছু নেই, রফতানি ধরে রাখাই ছিল এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে আমরা সফল হয়েছি।’

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল রফতানি প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্ব থেকেই পোশাক আমদানি কমিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকেও আমদানি কমায়। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় এখন তারা অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও আমদানি বাড়াচ্ছে।’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে রফতানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘পোশাক খাতে রফতানি বাড়তে কিংবা রফতানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জ্বালানি খাতে সক্ষমতা বাড়তে হবে। এই খাতের জন্য জ্বালানি সংকট দূর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

রফতানি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ( বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক রফতানির অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর ডিউটি কম। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকে ডিউটি (শুল্ক) যেখানে সাড়ে ১৬ শতাংশ, সেখানে ভিয়েতনামের সাড়ে ৫ শতাংশ ও ভারতের পোশাকে শুল্ক সাড়ে ৬ শতাংশ। আমদানি শুল্কের এই বিষয়টি কাটিয়ে উঠেও আমরা ভালো করছিলাম। তবে দেশে রাজনৈতিক অস্থরিতা ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পিছিয়ে পড়েছি। এটি আরও অনেক খারাপ হতো পারতো। এমন পরিস্থিতিতেও যে রফতানি হয়েছে তা আমার কাছে সন্তোষজনক। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে পোশাক রফতানি হয়েছে সেটি বর্তমান প্রেক্ষিতে ভালোই বলা চলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পোশাক রফতানি আরও বাড়বে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইমেজ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও সুবিধা পেতে পারি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরই হুঙ্কার দিয়ে জানিয়েছেন, চীনের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন এবং ব্রিকস’র আওতাভুক্ত দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসাবেন। সেটি যদি হয় তাহলে বাংলাদেশের সামনে অবারিত সুযোগ রয়েছে। এখন আমরা সেই সুযোগ কতটুকু কাজে লাগাতে পারব সেটিই প্রশ্ন। কারণ, আমাদরে এখানে এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

পোশাক রফতানি যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর