Monday 09 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিধ্বংসী রাদারফোর্ডে হেসেখেলে রেকর্ড গড়া জয় উইন্ডিজের

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:৩৮ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:১১

শাই হোপ-শারফেন রাদারফোর্ডের ৯৯ রানের জুটিতে শুরুর চাপ কাটিয়ে ওঠে উইন্ডিজ

শেষ দশ ওভারে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৮৩ রান। শারফেন রাদারফোর্ডের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই দুরত্বটা ২০ বল হাতে রেখেই অতিক্রম করে ফেলল উইন্ডিজ। বাংলাদেশের দেয়া ২৯৫ রানের লক্ষ্য পাঁচ উইকেটে টপকে গিয়ে সেন্ট কিটসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ক্যারিবিয়ানরা।

সেন্ট কিটসে ওয়ানডেতে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৬৬ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল উইন্ডিজেরই। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ তিন জুটি আর রাদারফোর্ডের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে সেই রেকর্ড নতুন করে লিখল তারা। 

বিজ্ঞাপন

এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগে দুই দলের মুখোমুখি দেখায় সর্বশেষ ১১ ম্যাচের একটিতেও জেতেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সবকটিতেই জয়ী দল বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগে, ম্যাচ চলাকালীন নানান সময়ে উঠে এসেছে এই রেকর্ডের কথা। উইন্ডিজের রান তাড়ার শুরুটা দেখেও মনে হচ্ছিল, আগের ১১ ম্যাচের ভাগ্যই বুঝি বরণ করতে চলেছে তারা। 

প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ও এভিন লুইসকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তানজিম হাসান সাকিবের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন কিং, এভিন লুইসও একইভাবে ফিরেছেন নাহিদ রানার বলে। তবে শুরুর সেই চাপ আর ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশি পেসাররা। 

শুরুর সেই চাপ কেসি কার্টিকে নিয়ে সামলে উঠেন অধিয়ায়ক শাই হোপ। তৃতীয় উইকেটে দুজনের স্ট্রাইক রোটেশনে মন দিয়ে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। সেখান থেকেই অল্প অল্প করে লড়াই জমিয়ে তোলেন তারা। যদিও এই জুটির দুই-তৃতীয়াংশ রানই এসেছে হোপের ব্যাট থেকে। জমে ওঠা এই জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। তার এক শর্ট লেংথের বলে টেনে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হয়নি কার্টির, শর্ট মিড উইকেটে মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সেই জুটি ভাঙাটাই যেন শাপেবর হলো উইন্ডিজের। পাঁচে নেমে রাদারফোর্ড শুরু করেন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়া। হোপের সাথে নিলে ব্যাট করতে থাকেন দেখেশুনে, সিঙ্গেল-ডাবলসেই রান বের করেছেন বেশি। শটও খেলেছেন ডেলিভারি বুঝে। দারুণ ব্যাট করতে থাকা দুজন ৯৩ বলে গড়েন ৯৯ রানের ম্যাচ বাঁচানো এক জুটি। শতরান ছোঁয়ার আগেই এই জুটি ভেঙে দলকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন মিরাজ। ৮৮ বলে ৮৬ রান করে জাকের আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন হোপ। তার ইনিংস দেখে কেউ ভাবতেও পারেন, ধীরগতির ব্যাটিং। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে সেটাই ছিল আদর্শ। 

এই জুটির পথেই ষষ্ঠ ফিফটির দেখা পান রাদারফোর্ড। ৪৭ বলে পেয়ে আন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি। পরের পঞ্চাশ ছুঁতে তার লেগেছে মাত্র ৩০ বল। অর্থাৎ ফিফটির পর আরো বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। সৌম্যের বলে তানজিম সাকিবে ওভার থ্রো থেকে চার হলে পেয়ে যান সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর টানা দুই ছক্কা মেরে জয়কে নিয়ে আসেন আরো কাছে। সাত চার আর আট ছক্কায় ৮০ বলে ১১৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস থামে সৌম্যের বলে শর্ট থার্ডম্যানে নাহিদ রানার হাতে ক্যাচ দিয়ে।  

শেষটা করেছেন রাদারফোর্ডের সাথে মাত্র ৫৭ বলে ৯৫ রানের মারকুটে জুটি গড়া জাস্টিন গ্রিভস। দলের হয়ে জয়সূচক রান এসেছে তার ব্যাট থেকেই। ৩১ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। 

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ তামিম, মিরাজ, মাহমুদউল্লাহর তিন ফিফটির সাথে জাকের আলী অনিকের ৪৮ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৯৪ রান তোলে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আগে ব্যাটিং করে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ, সব মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। 

গ্লোবাল সুপার লিগে ব্যাট হাতে পারফর্ম করে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতে আসা সৌম্য সরকার আজও দারুণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। আগের বলেই দারুণ এক কভার ড্রাইভে চার মেরেছিলেন আলজারি জোসেফকে। কিন্তু পরের বলেই অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি। ১৮ বলে ৩ চারে করেন ১৯ রান। তিনে নামা লিটন দাসও একইভাবে খোঁচা দিয়ে আউট হন। ৭ বলে ২ রান করেন তিনি। 

দ্রুত ২ উইকেট পড়লেও তানজিদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে সেই চাপ কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। রানের চাকা সচল হয় মিরাজের সাথে ৯৭ বলে ৭৯ রানের জুটিতে। এই জুটির পথে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটির দেখা পান তানজিদ। আউট হওয়ার আগে ৬০ বলে ৬০ রানের ইনিংসটি তিনি সাজান ছয়টি চার ও তিনটি ছক্কায়। পরের উইকেট জুটিতে রান তোলার দায়িত্ব নেন মিরাজ আর এক বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা আফিফ হোসেন। চতুর্থ উইকেটে দুজন তোলেন ৫৪ রান। শেফার্ডের বলে জেডেন সিলসের হাতে আফিফ ক্যাচ দিলে ভাঙে সেই জুটি। 

দলীয় সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংস খেলা মিরাজ ব্যক্তিগত ৩১ রানের মধ্যেই জীবন পান দুবার। দুবারই তার ক্যাচ ফেলেন কেসি কার্টি। অবশ্য পঞ্চম ওয়ানডে ফিফটির দেখা পাওয়া মিরাজও এরপর আর টানতে পারেননি ইনিংস।  সিলসের লাফিয়ে ওঠে বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন তিনি। 

এরপর বাকিটা পথ মাহমুদউল্লাহ ও জাকেরে ব্যাটে এগোয় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৪ বলে ৯৬ রান যোগ করেন তারা, বাংলাদেশের ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হওয়ার আগে ৪০ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৮ রান করেন জাকের। শেষ পর্যন্ত  উইকেটে থাকা মাহমুদউল্লাহ করেন ৪৪ বলে ৫০ রান।

সারাবাংলা/জেটি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর