Monday 09 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমি তো বলিনি বাইরে থেকে আইনজীবী এনে ডিফেন্স করতে পারবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৫ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:২৯

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের মামলায় আসামিপক্ষে আইনি প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বারের কোনো সদস্য অংশ নিতে পারবে না, তবে অন্য বারের কোনো সদস্য অংশ নিলে বাধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এ কথা জানান। সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর সার্বিক বিষয় জানাতে জেলা আইনজীবী সমিতি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

আলিফ খুনের মামলায় আসামিদের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়াতে না দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো বলিনি বাইরে থেকে আইনজীবী এনে ডিফেন্স করতে পারবে না। তবে হত্যা মামলার একটি নিয়ম আছে। হত্যা মামলা যখন চলবে, তখন আদালত নিজেই একজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন আসামিপক্ষে। এটাকে স্টেট ডিফেন্স বলে। যিনি মারা গেছেন তিনি আমাদের সমিতির সদস্য। তাই আমরা মনে করি, তার রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আসামিপক্ষে দাঁড়িয়ে আমাদের কেউ নির্দোষ, এটা যেন না বলে সে অনুরোধ করেছি। তবে আইনজীবী থাকবে না-এমনটা বলিনি।’

ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময়ের পক্ষে আইনজীবীদের আদালতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো আইনজীবীকে নাজেহাল করা হয়েছে, আদালতে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা হামলা করা হয়েছে- এমন কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। মামলাটির আসামিদের মধ্যে যাদের নাম এসেছে বলে শুনেছি অধিকাংশই আদালতে তারা মামলা লড়ছে স্বাভাবিকভাবে, আমি শুনেছি। কেউ যদি না আসে এটা ব্যক্তিগত বিষয়। অনেকেই আদালতে আদালতের কার্যক্রম করছেন।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ‘গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাইফুল ইসলাম আলিফকে উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের অনুসারীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে, লাঠিপেঠা করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ দেশব্যাপী এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আমরা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বলে আসছি ওই দিনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সময় আদালত এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় সন্ত্রাসীরা এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’

‘এছাড়া মসজিদ, আদালত, ল-চেম্বার, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের গাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর করার সুযোগও পেয়েছিল তারা। আদালত অঙ্গনে দীর্ঘসময় চিন্ময় দাশকে প্রিজন ভ্যানে রাখা হয় এবং তিনি প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ড মাইক দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে তার অনুসারীদের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার নির্দেশ দেন। ফলে আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংগঠিত হয়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনজীবী আলিফ খুনের মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইসকনের যে সকল সন্ত্রাসী এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুল কাদের, সহ সাধারণ সম্পাদক কাশেম কামাল, অর্থ সম্পাদক আশরাফুল হক আনসারী, পাঠাগার সম্পাদক আহমদ কবির ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাজেবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন চিন্ময়ের অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর এক পর্যায়ে পুলিশ-বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে দুর্বত্তরা।

এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও ছয়টি মামলা হয়।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুন টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর