৪০ বছরের আইনি লড়াই শেষে জয়ী হরেন্দ্র
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:১২ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:২৩
ঢাকা: ৪০ বছরের আইনি লড়াই শেষে জয়ী হয়েছেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তা হরেন্দ্র নাথ চন্দ্র। প্রমাণিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুয়া মামলা করেছিল। তবে সেই প্রমাণের জন্য হরেন্দ্রকে ৮০ বছরেরর জীবনের অর্ধেকই কাটাতে হয়েছে আদালতের বারান্দায়, আইনি লড়াইয়ে।
মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে হরেন্দ্র ২০ লাখ টাকা পাবেন। তিন মাসের মধ্যে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে হরেন চন্দ্র নাথের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ৪০ বছরের আইনি লড়াই শেষে হরেন্দ্র জয় পেয়েছেন। এখন তিনি বৃদ্ধ। একসময় চাকরি হারিয়ে বাসের কন্ট্রাক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে আইনি লড়াই ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছেন।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেন্দ্র নাথ চন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ৪০ বছর আগে ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। মামলায় খালাস পেলেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করে মামলাটি জিইয়ে রাখে। এভাবে চার দশক কেটে গেলেও আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
হরেন্দ্র বিএ পাস করে ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় যোগ দিয়েছিলেন। তিন বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক হন। এরপর তাকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি করা হয়। সেখানে কর্মরত অবস্থায় রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা সিল-স্বাক্ষরসহ লিখিতভাবে ওই অর্থ বুঝে নেন। কিছুদিন পর ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওই টাকা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তহবিল তছরুপের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে হরেন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এরপর গ্রাহকের টাকা জমা না দেওয়ার আরেক মামলায় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে স্থাপিত ওই কর্মকর্তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে হরেন্দ্রনাথ জেল খেটে বের হন।
এর আগে ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন্দ্রনাথসহ সবাই।
মামলায় পরাজিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গোপনে ১৯৮৮ সালে হরেন্দ্রসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সব অর্থ ফেরত দিতে আদেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে আবেদন (মিস কেস) করেন হরেন্দ্র নাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আপিল গ্রহণ করেন, একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন।
এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট এ আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
এরপর গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আজ শুনানি শেষে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হরেন্দ্র নাথ চন্দ্রকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এইচআই