Monday 09 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাকরি হারাচ্ছেন রাসিকের ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৬ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:১২

রাজশাহী সিটি করপোরেশন।

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সময় প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে খোলা হয়েছিল অতিরিক্ত ৯টি বিভাগ। চাকরির নামে করেছিলেন দলীয় নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন। এই বিভাগ ৯টি এখন বন্ধ করে দিতে চাইছে রাসিক প্রশাসন।

রাসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে চাকরি হারাতে পারেন ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই বিভাগগুলোতে কর্মরতরা বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।

বিজ্ঞাপন

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিভাগ চালুর নামে রাসিকের অর্থ অপচয়ের পথ তৈরি করেছিলেন তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এসব বিভাগে বিভিন্ন পদে ছিলেন যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। রাসিকের বেতন-ভাতা নিলেও ঠিকভাবে অফিস করতেন না, তাদের দেখা মিলত দলীয় কর্মসূচিতে।

৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রাসিকে নিয়োজিত প্রশাসক দায়িত্ব নিয়ে আয়-ব্যয়ের খাত যাচাইয়ে তৎপর হন। এ সময় প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে সৃষ্ট বিভাগে অর্থ অপচয়ের বিষয়টি তার নজরে আসে। বেরিয়ে আসে তৎকালীন মেয়র লিটনের আস্থাভাজনদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও। তাই অযাচিত অর্থ অপচয় রোধে অপ্রয়োজনীয় বিভাগ বন্ধে উদ্যোগ নেন নতুন প্রশাসক।

বিভাগগুলো হলো— সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি শাখা, ধর্মবিষয়ক শাখা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা, শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগ, আইসিটি শাখা, সিটি মিউজিয়াম ও আর্কাইভ শাখা, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন শাখা এবং নারী ও শিশু কল্যাণ শাখা।

সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অনুমোদিত বিভাগ আছে ১১টি। এগুলো হলো— সচিবালয় বিভাগ, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ শাখা, ম্যাজিস্ট্রেসি শাখা, অ্যানফোর্সমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং শাখা, সম্পত্তি শাখা, মসজিদ শাখা, ভাণ্ডার শাখা, শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি শাখা।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরেও ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন করে ৯টি বিভাগ চালু করেন সাবেক মেয়র লিটন। এসব বিভাগের কোনো অনুমোদন না থাকলেও বাজেটের ভিত্তিতে কাজ হতো। এসব কাজ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো রাসিকের নির্ধারিত বার্ষিক বাজেট থেকে।

নাম প্রকাশ না করে সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারা এগুলো অনুমোদনের জন্য ঢাকা পাঠিয়েছিলেন। তবে এই বিভাগগুলো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন না পেলেও তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিভাগগুলো পরিচালনা করেছেন। বিভাগ চালুর নামে বড় অঙ্কের অর্থ অপচয়ের পথ তৈরি করেছেন তিনি। এমনকি কিছু বিদেশিদের ডেকে এনেও বড় বড় অনুষ্ঠানের নাম করে টাকা জলে ঢালা হয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘করপোরেশনের ছয়টি সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে। এই ছয় বিভাগ ছাড়া আরও বিভাগ সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন খুলেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, সিটি করপোরেশনের কলেবর ৯৮ বর্গকিলোমিটার থেকে ৩৪২ বর্গকিলোমিটার করা। এ জন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এই বৃহৎ পরিধির এলাকা বাড়বে এবং নতুন নতুন কাজ করতে হবে। অনেকগুলো শাখা প্রস্তাব করা হয়েছিল। এগুলো সাংগঠনিক কাঠামো নয়। তাই বাজেট অনুমোদিত হিসেবে এটি পরিচালিত হয়।’

প্রশাসক আরও বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সিটি করপোরেশনের জায়গা বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত করপোরেশনের অনুমোদনের বাইরে কোনো শাখা ধারণ করতে চাচ্ছি না। পর্যায়ক্রমে এই শাখাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে আমাদের সাশ্রয় হবে। কেউ দক্ষ কর্মী হলে তাকে অন্য বিভাগে দেওয়া হবে। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় শাখা ও কর্মচারী থাকবে না। মূলত সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে অর্থ বা সিটি করপোরেশনের কাজ পরিচালনা করাটাই সমীচীন।’

সারাবাংলা/এইচআই

রাজশাহী সিটি করপোরেশন রাসিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর