Thursday 18 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে মংডু, প্রভাব পড়বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও

সারাবাংলা ডেস্ক
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৫ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৫৮

মংডুতে জান্তা সরকারের শেষ নিরাপত্তা চৌকি দখলের পর আরাকান আর্মি। ছবি: আরাকান আর্মির ওয়েবসাইট

আট মাসেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত রাখাইনের মংডু শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে আরাকান আর্মি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশটির এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

এর পরপরই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে আরকান আর্মি অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ওই ঘোষণার পর নাফ নদীতে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বিজিবির টহলও বাড়ানো হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের এই যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) কয়েকটি সংগঠনের অবস্থান জান্তা বাহিনীর পক্ষে। ফলে রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়ায় নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, এমনিতেই থমকে থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানকার জান্তা সরকারের সঙ্গে। মংডুতে যেহেতু এখন এই সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, তাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও আরও এক দফা ঝুলে যেতে পারে।

বিবিসি বার্মিজ সার্ভিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার মংডু, বুথিডং ও পালেতাওয়া দখলের নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি জানিয়েছে, জান্তার শেষ অবশিষ্ট সীমান্ত ঘাঁটি মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত বর্ডার গার্ড পুলিশের পাঁচ নম্বর ব্যাটালিয়নও গত কয়েক মাসের টানা লড়াইয়ের পর গত রোববার তারা দখলে নিয়েছে।

মংডুতে আরও একটি গ্রাম আরাকান আর্মির দখলে। ছবি: আরাকান আর্মির ওয়েবসাইট

আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খা বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসকে বলেছেন, তারা পশ্চিমাঞ্চলের জান্তা বাহিনীর কমান্ড সদর দফতর দখলসহ রাখাইন রাজ্যের পুরোটা নিয়ন্ত্রণ নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মংডু ও সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরাকান আর্মি। নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশেও টহল জোরদার করা হয়েছে। নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সর্তক অবস্থানে রাখা হয়েছে কোস্ট গার্ড ও বিজিবিকেও।

টেকনাফের ইউএনও এহসান উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, সীমান্তে অযাচিত যাতায়াত বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। নাফ নদীতে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে যেন কোনোভাবেই কোনো নৌকা না যায়, সে জন্যও আমরা সতর্কতা জারি রেখেছি। কেউ যেন সীমানা পেরিয়ে এ দিকে না আসে, সে দিকেও আমরা নজর রাখছি।’

এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট নৌকাগুলোকে নাফ নদীতে বাংলাদেশ অংশে সর্তকতার সঙ্গে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও বড় ট্রলার ও জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলেও জানান ইউএনও।

মংডু ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়া ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্ত যেন কেউ অতিক্রম না করে, সেটি নিশ্চিত করা। কোনো অবস্থাতেই যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেদিক বিবেচনায় টহল জোরদার করেছি।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গারা জান্তা বাহিনীর পক্ষ নেওয়ায় এখন রোহিঙ্গা সংকট আরও বাড়ল। কারণ যেসব সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে পরাজিত হয়ে পালিয়েছে, তাদেরও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘রাখাইন এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভরসা করতে হবে নেপিডোর ওপর। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে এই সংকট সমাধান সম্ভব না। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলো।’

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর