বিগত সরকারের সময় এনজিওরা চাপে ছিল: আইএনজিও
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৪০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৪
ঢাকা: আরবান আইএনজিও ফোরামের নেতারা বলেছেন, বিগত সরকারের সময় এনজিওগুলো ভাল ছিল না। বিভিন্ন চাপের মধ্যে ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এনজিওরা একটু ভাল আছে। এখন, আমরা ইতিহাসের একটি ক্রান্তিলগ্নে রয়েছি, যেখানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আমাদের ভূমিকা রয়েছে। এ পটভূমিতে, আরবান আইএনজিও ফোরাম আসন্ন সংস্কারকে অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং ভবিষ্যতের জন্য বাস্তবসম্মত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য সংবিধানসহ নির্বাচন ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, পুলিশ, স্বাস্থ্য খাত, শ্রম অধিকার, নারী, দুর্নীতি দমন, মিডিয়া সংস্কার, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রস্তাব করেছি। যা দেশের সবার জন্য একটি টেকসই এবং অন্তর্ভূক্তিমুলক ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, আরবান আইএনজিও ফোরাম (ইউআইএনজিওএফ) বাংলাদেশ ২০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (আইএনজিও) একটি প্লাটফর্ম; যা বাংলাদেশের নগর পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে থাকে। এ ফোরামের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ সরকারের নগর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনদের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইএনজিও’র উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-
বাংলাদেশের সংবিধান হতে হবে এদেশের নাগরিকদের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং জাতির প্রতি দায়বদ্ধ।
সংবিধানকে সকল ঔপনিবেশিক ও অমার্জিত শব্দ ও পরিভাষা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন হবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যা মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভূক্ত হবে। জলবায়ু অভিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
অভিবাসীদের জন্য পরিকল্পিত অর্ন্তভূক্তিমূলক পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের স্থান ও বাস্তবভিত্তিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অনানুষ্ঠানিক বসতিতে অপরিকল্পিত উচ্ছেদ প্রতিহত করতে হবে।
সংবিধানে বৃহত্তর ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানে বর্ণিত অনুপাত অনুযায়ী, কৃষি পতিত ও আদ্র জমিসহ বন, মহাসাগর ও জলপথের ভারসাম্য রক্ষার জনা সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসরণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট তথ্যভান্ডারকে তথ্য ইকোসিস্টেমের একটি অংশ করতে হবে।
দেশের যেকোনো স্থানে এনআইডি এবং জন্ম নিবন্ধন ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার করতে হবে। জাতীয়ভাবে সঠিক তথ্য ভান্ডার থাকতে হবে।
প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত এবং জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে সমতা এবং বৈষম্যহীনতাসহ জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর ও টেকসই পরিবেশের অধিকার নিশ্চিত করে পরিবেশগত ন্যায্যতার বিধান অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য জনমুখী গণভোটের ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
ভূমি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসহ আদিবাসিদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তা রক্ষা করতে হবে।
নির্দিষ্ট অনুপতে (প্রায় ৫৯) বা জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনা করে জাতীয় সংসদে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং শক্তিশালী মনিটরিংয়ের বিধানসহ স্থানীয় সরকারে কর্তৃত্ব হস্তান্তর বাধ্যতামুলক করতে হবে।
তথ্য প্রাপ্তিকে একটি সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে রাখতে হবে। রাষ্ট্র কথা প্রচার চ্যানেলিং এবং ব্যবহারকারীদের তথ্যে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করবে।
রাষ্ট্রকে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় নাগরিকদের জনসেবা নিশ্চিত করতে হবে, বেসরকারি খাতকে সংবেদনশীল/সামাজিক ব্যবসায়িক ধারায় নিযুক্ত করবে।
মর্যাদাপূর্ণ সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
নির্দিষ্ট কৌশলের অধীনে একটি সুশাসন ব্যবস্থা সকল মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
রাষ্ট্রকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (ধারণ, ফাঁকি ও স্থানান্তর) প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নিতে হবে যেখানে সরকারি এবং বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য বিস্তারিত নির্দেশিকা থাকবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তির মৌলিক তথা এবং ব্যক্তিগত ইতিহাসসহ স্থানীয় সরকারের সকল নেতাদের ডাটাকেন্দ্রে তৈরি করা, যেটি জাতীয় ডাটা ইকোসিস্টেমের অংশ হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী বাছাইসহ নানা ধরনের কাজ সহজ হবে।
রাষ্ট্র শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেবে এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকরী কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করবে। শিক্ষার গুণগত মান এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করবে।
বিদ্যমান নারী বান্ধব আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর নজরদারি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা এবং নিয়মিত বেতন প্রদান নিশ্চিত করার জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।
সম্পাদকীয় নীতি বা চর্চার জন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দায়ী থাকবেন না।
প্রতিক্রিয়াশীলতা, নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে বিবেচনা করে মিডিয়া নীতিমালা পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।
গণমাধ্যম থেকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব দূর করতে হবে।
নগর সরকারের অধীনে নগর পুলিশ থাকতে হবে।
সিটি গভর্নমেন্টের অধীনস্থ সকল অফিসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলার জন্য সিটি পুলিশ ডেডিকেটেড ডেক্স সহায়তা প্রদান করবে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে নৈতিকতার একটি বড় লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে একক হস্তক্ষেপের সাজা হিসেবে মৃত্যুদন্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান থাকা উচিত। হস্তক্ষেপ পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা এবং প্রথম ব্রিফিংয়ে সকল রাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
আমলাতন্ত্র কমাতে ও আইনি সেবার সুযোগ বাড়াতে পুলিশের পরিষেবাগুলো ডিজিটালে রূপান্তর করা।
পুলিশ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্ব হস্তান্তরের অনুসরণে হবে।
পুলিশ পরিষেবাগুলো বাধা দেওয়ার পরিবর্তে সহায়ক হতে হবে। পরিবর্তনের আলোকে পুলিশ পরিষেবার জন্য কর্তৃপক্ষের ম্যাট্রিক্স থাকতে হবে।
প্রাসঙ্গিক দক্ষতা বিভাগ্য উইংগুলিতে পোস্টিং এবং বদলির ভিত্তি হওয়া উচিত। পুলিশ এবং স্থানীয় সরকারের দক্ষতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান এর আলোকে ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পুলিশ পরিষেবাগুলিতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি এড়াতে সিভিল সার্ভেন্টদের ডেটাবেসগুলি ডেটা হীকাসিস্টেমের অংশ হতে হবে।
সারাবাংলা/ এএইচএইচ/আরএস