বাজেট পরিপত্র-১ জারি
২৩ জানুয়ারির মধ্যে সংশোধিত মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো প্রেরণের নির্দেশ
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৬
ঢাকা : দারিদ্র নিরসন, নারী উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কর্মসূচীর ওপর গুরুত্বারোপ করে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ করার জন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। নির্দেশ অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন এবং ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের প্রক্ষেপন প্রণয়ন করতে হবে। প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপন প্রণয়নে সমস্ত সম্পদসীমাকে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ে বিভক্ত করে পৃথকভাবে প্রদর্শন করে দেখাতে হবে। প্রণীতব্য এ বাজেট কাঠামো আগামী ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারির মধ্যে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনাক্রমে বাজেট কাঠামো চূড়ান্ত করবে।
অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত ‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদকরণ’ শীর্ষক বাজেট পরিপত্র-১-এ এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার এটি জারি করা হয়।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়ানো এবং সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের অর্জন নিশ্চিত করতে ‘মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো’ পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারের ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১’ ও ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫)’-এর আলোকে কৌশলগত উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা; সরকারের মৌলিক নীতি-নির্ধারণী দলিলসমূহে প্রতিফলিত কৌশলগত নীতি ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে বাজেট বরাদ্দের যোগসূত্র স্থাপন করা; মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের সঙ্গে বাজেট বরাদ্দের যোগসূত্র অধিকতর শক্তিশালী করা এবং মধ্যমেয়াদে প্রাপ্য সম্পদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত ব্যয় পরিকল্পনা তৈরি করা মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ করার প্রধান উদ্দেশ্য। এ প্রক্রিয়ার তিনটি পর্যায় রয়েছে- কৌশলগত, প্রাক্কলন ও বাজেট অনুমোদন। কৌশলগত পর্যায়ের প্রথম ধাপে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদ্যমান বাজেট কাঠামো হালনাগাদ করতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, রাজস্ব ও প্রাথমিক প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রাজস্ব আহরণের মধ্যমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। অন্যদিকে প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মধ্য মেয়াদে কী পরিমাণ সম্পদ পেতে পারে সে সম্পর্কে আগাম ধারণা প্রদান করা এবং প্রদত্ত ব্যয়সীমার মধ্যে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় সম্বলিত একটি সমন্বিত বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করা। প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমার মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ কমে গেলে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা সে পরিমাণ কমে যাবে এবং বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ বাড়লে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা সে পরিমাণ বেড়ে যাবে।
পরিপত্রে বলা হয়, প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমগ্র সম্পদসীমাকে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ে বিভক্ত করতে হবে এবং এরপর অধীনস্থ অধিদফতর ও সংস্থাওয়ারি প্রাথমিক ব্যয়সীমা (পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পৃথকভাবে প্রদর্শনপূর্বক) নির্ধারণ করতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক উন্নয়নমূলক ব্যয় সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্য এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
পরিপত্রে দারিদ্র ও নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ দারিদ্র নিরসন ও নারী উন্নয়নকে কীভাবে প্রভাবিত করবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ সে সম্পর্কিত যৌক্তিকতা বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগে লিপিবদ্ধ করতে হবে। দারিদ্র নিরসন ও নারী উন্নয়নে কৌশলগত উদ্দেশ্যের প্রভাব বিশ্লেষণ এবং প্রকল্প ব্যয়ের ব্যবহার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
পরিপত্রে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের ওপর প্রভাব সম্পর্কিত কার্যক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট উষ্ণায়ন, খরা, অনাবৃষ্টি, আগাম বন্যা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি ইত্যাদি টেকসই ও কার্যকর উন্নয়নের অন্তরায়। ফলে সবুজ প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্রকে জলাধার সংরক্ষণ-পূর্বক প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি অর্থাৎ গ্রীণ ক্লাইমেট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারি ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।
পরিপত্রে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় (অভিযোজন ও প্রশমন) কীভাবে ভূমিকা রাখবে -সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও উপাত্তসহ বিশ্লেষণ প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’-এ বর্ণিত ৬টি থিমেটিক এরিয়া ও এর আওতায় ৪৪টি কার্যক্রমের ভিত্তিতে জলবায়ু অর্থায়ন নিরূপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এটি ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
সারাবাংলা/আরএস