ফিস্টুলা নির্মূলে রাষ্ট্রসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:২১
ঢাকা: প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি গুরতর স্বাস্থ্য সংকট, যা নারীদের জীবনকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্ত নারীরা শুধু শারীরিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং অনেক সময় সমাজ ও পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাদের শীর্ষস্থানীয় পদ থেকে বিতাড়িত হতে হয় এবং নির্যাতনের শিকার হন। এমন পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলে রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টোলা সার্জন্স (আইএসওএফএস)।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারের (বিআইসিসি) লিজান্ডারি হলে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টোলা সার্জন্স (আইএসওএফএস)—এর সভাপতি অধ্যাপক সায়েবা আকতার। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টোলা সার্জন্স (আইএসওএফএস)-এর ৯ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে এই ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সোয়েবা আকতার বলেন, ‘ইউএনএফপিএ ২০০৩ সাল থেকে ফিস্টুলা নির্মূল বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত জোরালো কাজ করছে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালও এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি জটিল শারীরিক অবস্থা, যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল প্রসবের কারণে নারীদের মূত্রনালী বা পায়ুপথের মধ্যে অস্বাভাবিক যোগাযোগের সৃষ্টি করে। ফলে রোগীরা মূত্র বা মল নিঃসরণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং সমাজের কাছে অপমানিত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি সাধারণত গরীব, প্রত্যন্ত এবং স্বাস্থ্য সেবা সংকটাপন্ন এলাকায় বেশি দেখা যায়। বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিশেষত আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ নতুন ফিস্টুলা রোগী তৈরি হয়।’
অধ্যাপক ডা. সোয়েবা আকতার বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবজনিত ফিস্টুলা একটি গুরতর স্বাস্থ্য সংকট, যা নারীদের জীবনকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্ত নারীরা শুধু শারীরিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং অনেক সময় সমাজ ও পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, তাদের শীর্ষস্থানীয় পদ থেকে বিতাড়িত হতে হয় এবং নির্যাতনের শিকার হন।’
এই রোগটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য জানিয়ে রাষ্ট্রসহ এই রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. সোয়েবা আকতার বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্ট্রেটিক ফিস্টোলা সার্জন্স (আইএসওএফএস)-এর ৯ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য- প্রসবজনিত ফিস্টুলা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যৌথ প্রচেষ্টা গড়ে তোলা।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভার্চুয়াল বার্তায় ফিস্টুলা সার্জনদের অনুপ্রাণিত করেছেন এবং এই সম্মেলনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এবার ৩৫টি দেশের ১৬৭ জন আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীসহ ৫০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম