Friday 13 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বগুড়া মুক্ত হয়েছিল এ দিন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৫ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৯

মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া: মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের তিন দিন আগে ১৩ ডিসেম্বর বগুড়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্রবাহিনী। সম্মুখযুদ্ধের তুমুল লড়াইয়ের পর হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হয়। অবশেষে শত্রুমুক্ত হয় বগুড়া। মুক্তির আনন্দে উড়তে থাকে বিজয় পতাকা। পরাজয়ের চূড়ান্ত স্বাদ নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বগুড়া এডওয়ার্ড পার্কে (বগুড়া পৌর পার্ক) আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে গোটা জাতির মতো বগুড়াতেও মুক্তিকামী জনতা মুক্তিসংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক সেনারা নির্মমতা শুরু করলে বগুড়ায় মুক্তিসেনারা যার কাছে যা ছিল, তা নিয়েই প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিরোধ যুদ্ধে তোতা, আজাদ, চুন্নু হিটলু পাকাহানাদারদের বুলেটের সামনে বুক উঁচিয়ে মাতৃভূমির জন্য শহিদ হন।

বিজ্ঞাপন

মার্চে বগুড়া শহরে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা পাক সেনার ওই দল শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়। এপ্রিল থেকে পাক সেনারা নতুন করে হামলা শুরু করে অবশেষে শহরে প্রবেশ করে। গোটা জেলায় চালায় হত্যযজ্ঞ আর ব্যাপক নির্যাতন।

একাত্তরের মাঝামাঝি থেকেই বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর গেরিলা যুদ্ধ শুরু হয়। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর হাতে বগুড়ায় শহিদ হন বহু মুক্তিকামী।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দিক থেকে জেলা সদরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। ১০ ডিসেম্বরের পর মিত্রবাহিনী বগুড়ার দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিবাহিনীর মনোবল বেড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম যে দলগুলো বগুড়া মুক্ত করতে শহরে প্রবেশ করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম সবুর সওদাগরের দল। এই দলের সদস্য মনুজুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘১৩ ডিসেম্বর বিকেলে ফটকি ব্রিজের কাছে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধে শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। এরপর আমরা শহরের দিকে প্রবেশ করতে থাকি।’

বগুড়া সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের সাবেক সভাপতি ও ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান হেলাল জানান, মিত্রবাহিনী ১২ ডিসেম্বর মহাস্থান এলাকায় অবস্থান নিলে সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা পরাজিত হয়ে পিছু হটলে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী বগুড়া মুক্ত করার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন।

১৩ ডিসেম্বর সকালে প্রথমে ওয়াপদা বোর্ড ও পরে মহিলা কলেজের সামনে যুদ্ধেও হানাদার বাহিনী হটতে বাধ্য হয়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা মিত্রবাহিনীকে নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। উড়িয়ে দেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ওই দিন পাক সেনারা বিভিন্ন স্থান থেকে পিছু হটে এডওয়ার্ড পার্কে সাদা কাপড় উড়িয়ে আত্মসর্মপণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন এলাকা থেকে শহরের দিকে এগিয়ে আসেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, তুমল লড়াইয়ের মাধ্যমে তারা হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেন এবং মুক্ত করেন বগুড়া। একই সঙ্গে কাহালু নন্দীগ্রামসহ বগুড়ার আরও এলাকা মুক্ত হয় একই দিনে।

সারাবাংলা/এইচআই

একত্তর ডিসেম্বর বগুড়া মুক্ত দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর