Friday 13 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, ৩ জেলার শৈত্যপ্রবাহ ছড়াতে পারে আরও দুদিন

সারাবাংলা ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:০২ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৭

কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের সকাল। ছবি: সারাবাংলা চুয়াডাঙ্গা করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ডিসেম্বরের মাঝ পেরোনোর আগেই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করেছে তিন জেলা পঞ্চগড়, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ে— ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

এ ছাড়া রাজশাহীতেসর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গত কয়েক দিম ধরে তাপমাত্রার যে নিম্নমুখী প্রবণতা, তা আরও কয়েক দিন আরও দুয়েকটি জেলায় বিস্তৃত হয়ে অব্যাহত থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বরের শেষ ভাগে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। ছবি: সারাবাংলা চুয়াডাঙ্গা করেসপন্ডেন্ট

আবহাওয়া অফিসের হিসাবে, তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এ ছাড়া ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা নামলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটি অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

চলমান শৈত্যপ্রবাহ আরও দুদিন থাকতে পারে বলে জানালেন আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, আগামী দুই দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। ফলে তিন জেলা থেকে শৈত্যপ্রবাহ পার্শ্ববর্তী তিন থেকে চারটি জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে দুদিন পর তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের নিয়মিত আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তিতেও আরও দুদিন তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদের সই করা সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তৃতীয় দিনে গিয়ে তাপমাত্রা থাকতে পারে অপরিবর্তিত। এর পরের ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

আগামী ৭২ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

শৈত্যপ্রবাহে নাকাল জনজীবন

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া এ অঞ্চলে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে।

এ মৌসুমের শুরু থেকেই পঞ্চগড়ে তাপমাত্রার পারদ নিম্নমুখী। গত তিন সপ্তাহে বেশ কয়েকদিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এই জেলায়। গতকাল বৃহস্পতিবার অবশ্য জেলায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শীতের তীব্রতা কাটাতে আগুন পোহাচ্ছেন মানুষেরা। ছবি: সারাবাংলা চুয়াডাঙ্গা করেসপন্ডেন্ট

তীব্র শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর বাতাসের কারণে এ জেলায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের।

মৌসুমের শুরু থেকেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও। এ জেলাতেও দুয়েকদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এলে শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা আরও কমে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, আজ (শুক্রবার) জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত শীত মৌসুমে ১২ জানুয়ারি জেলার ওপর দিয়ে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই দিন জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই মাসের ২৩ জানুয়ারি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত ২৬ দিন থেকে এ জেলায় ক্রমাগত তাপমাত্রা কমছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারদিক। প্রতিদিন রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনূভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দূর্ভোগ বাড়ছে। শ্রমজীবীদের আয়ের সুযোগও কমে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবেড্ডা (এ বছর) শীত এট্টু বেশিই লাগজে। তাই বেশিক্ষণ গাড়ি চালাইনো যাচ্চে না। প্যাসেন্দারও (যাত্রী) সেরাম পাওয়া যাচ্চে না। বারোমাসির মদ্দি শীতকালই বেশি কষ্ট কত্তি (করতে) হয়।’

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। ছবি: সারাবাংলা রাজশাহী করেসপন্ডেন্ট

এদিকে তীব্র শীতের জন্য সুপরিচিত হলেও দেশের উত্তর ও পশ্চিমের জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা এ মৌসুমে অনুভূত হতে শুরু করেছে একটু পরে। তবে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহের ধাক্কা এ জেলাতেও বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে গৃহহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষদের। রাস্তার পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। জেলায় এখন পর্যন্ত শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের সরকারি-বেসরকারি তেমন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সারাবাংলার পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহী ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট)

সারাবাংলা/এমপি/টিআর

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শীতকাল শৈত্যপ্রবাহ

বিজ্ঞাপন

‘১৪ ডিসেম্বর একটি বেদনাময় দিন’
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২৬

আরো

সম্পর্কিত খবর