খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন—ভারতকে সারজিস
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৪১ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:২৪
রাজশাহী: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘খুনি হাসিনা এতগুলো মানুষকে খুন করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে, সেই খুনিকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। যদি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চান, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজশাহী বিভাগের শহিদদের পরিবারকে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা বিবেকবোধ বেচে দেওয়া ওই প্রজন্ম নয়। তা হলে আমরা আমাদের প্রতিবেশী বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ভারতের দালালি করতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি, করব না।’
‘জুলাই অভুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে অন্তর্বরর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও ছেড়ে কথা বলবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু বাংলাদেশ পুলিশ নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সবাইকে একটি জিনিস আমাদের জায়গা থেকে অনুরোধ করতে চাই। আমরা কারও অন্ধ দালাল নই। আমরা ক্ষমতাপিপাসু নই। বিবেকবোধের জায়গায় যদি আমাদের মনে হয়, যে কেউ এই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, ইভেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসও যদি হয়, আমরা তাকেও ছেড়ে কথা বলব না।’
তিনি বলেন, ‘যারা গণহত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল তাদের আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। হত্যাকারীর পরিচয় তার যাই হোক- পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ- এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তাদের আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। তারা যেই পরিচয়েই পরিচিত হোক না কেন, তারা আমাদের কাছে একজন খুনি। তাদের এই খুনের বিচার করতে হবে।’
এখনও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সারজিস বলেন, ‘চব্বিশের অভুত্থানের চারমাস পেরিয়েছে। খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর নাটোরের খুনি এমপি শিমুল আজও আমাদের সামনে রয়েছে। আজও পাবনার সাঈদ চেয়ারম্যানের অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ এই খুনিরা প্রকাশ্যে আমার ভাইদেরকে পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে।
শহিদদের মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত না করার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘চব্বিশের অভুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন- মামলার জন্য কারও লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের জন্য যদি মরদেহ কবর থেকে তোলা না হয়, তাহলে এই চব্বিশের অভুত্থানে নতুন বাংলাদেশ আনতে গিয়ে যারা শহিদ হয়েছে কেনো তাদের লাশ উত্তোলন করতে হবে?’
গণহত্যায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গণহত্যার সঙ্গে আমরা পুরো বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে দেব না। কিন্তু দায়সারা কথাও আমরা মেনে নেব না যে, “খুনি হাসিনা বলেছিল বলে গুলি করেছি”। হাসিনা যদি গুলি চালানোর হুকুমও দেয়, তাহলে একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনার মনুষ্যত্ববোধ, দেশের মানুষের জন্য যে শপথ নিয়েছেন, সে মনুষ্যবোধ কোথায় ছিল? কতিপয় পুলিশ সদস্য সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের কেন এখনও বিচার হচ্ছে না? আজকে আমরা দেখছি ওইসব পুলিশ নতুন করে পোস্টিংয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। খুনের শাস্তি কি শুধু বদলি?’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সেই মামলাগুলো নিচ্ছে না, যে মামলাগুলোতে তাদের পুলিশ সদস্যদের নাম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সমঝোতা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই খুনি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে টাকার বিনিময়ে বাঁচানোর জন্য ব্যাকডোরে নেগোশিয়েশন করছে। এই যে মামলা বাণিজ্য, এতে রাজনৈতিক দল যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে। নতুন বাংলাদেশেও পুলিশ সদস্য বিভিন্ন জায়গায় মামলাবাণিজ্য করছে।’
গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারে পুলিশকেই সহায়তার আহ্বান জানিয়ে এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘পুলিশের যে সকল সদস্য গণহত্যায় জড়িত ছিল, যারা জড়িত ছিলেন না তারা যদি তাদের বিচারের জন্য সহযোগিতা না করেন, তাহলে পরোক্ষভাবে আপনারাও গণহত্যায় জড়িত হয়ে যাবেন। কালো দাগ লেগে গেছে পুলিশে, এই কালিমা আপনাদেরই মুছতে হবে। কোন রাজনৈতিক দলের দালালি আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না। আপনারা এটা করবেন না। পুলিশ দায়িত্বশীল হলে আগামী ৬ মাসেই বাংলাদেশ ঠিক হয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের ৪৬ জন শহিদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকার করে চেক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কয়েকজন সমন্বয়ক বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসআর