উপদেশ দেওয়ায় বৃদ্ধকে মারধর, ১১মাস অজ্ঞান থাকার পর মৃত্যু
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০৯ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১১
সিরাজগঞ্জ: জেলার শাহজাদপুরে বড় চুল কাটার উপদেশ দেওয়ায় বৃদ্ধকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এই ঘটনায় ১১মাস অজ্ঞান থাকার পর বৃদ্ধ মানুদাকান্ত লাহিড়ীর (৬২) মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান।
মৃত মানুদাকান্ত লাহিড়ী উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের জামিরতা গুধিবাড়ী গ্রামের মৃত লক্ষীকান্ত লাহিড়ীর ছেলে।
এর আগে মারধরের ঘটনায় মানুদাকান্ত লাহিড়ীর স্ত্রী শান্তনা লাহিড়ী বাদি হয়ে শাহজাদপুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এখন বিজ্ঞ আদালতকে মানুদাকান্ত’র মৃত্যুর বিষয়টি অবগত করে এই মামলার সঙ্গে ৩০২ (হত্যাকাণ্ড) যোগ করার জন্য আবেদন দিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন— একই গ্রামের মশিউর রহমান (৪৫) ও তার দুই ছেলে আবির রহমান (২৫) ও নিবির রহমান সনি (২২)।
নিহতের ভাতিজা তুষার কান্ত লাহিড়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে আবির রহমান ও নিবির রহমান সনি চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মানুদাকান্ত’র বাড়ির সামনে আড্ডা দিচ্ছিল এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিল। এ সময় মানুদাকান্ত লাহিড়ী তাদের এসব করতে বারণ করেন এবং চুল বড় থাকায় চুল কাটতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবির ও সনির বাবা মশিউর রহমান মানুদাকান্তকে মোবাইলে কল করে জরুরি কথা আছে বলে তাদের বাড়ির সামনে ডেকে নেন।
তিনি বলেন, ‘মানুদাকান্ত সেখানে গেলে মশিউর রহমানের নির্দেশে তার দুইছেলে আবির ও সনি তাদের সহযোগী কয়েকজন বখাটে যুবকসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে মানুদাকান্ত লাহিড়ীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর এক পর্যায়ে মানুদাকান্তের নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে প্রথমে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে বলেন। পরে তাকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তুষার কান্ত লাহিড়ী বলেন, ‘আমরা সেদিন রাতেই কাকাকে বগুড়া থেকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। যেহেতু মারধরে তার মাথার খুলিও ভেঙ্গে গিয়েছিল তাই সেখানে তার মাথার গুরুতর অস্ত্রপচারের পরে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে ওখানেই ভর্তি রাখা হয়েছিল। এরপর যখন আমরা আর খরচ যোগাতে পারছিলাম না এবং জ্ঞানও ফিরছিল না তখন সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে গতকাল ১৩ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি ছিলেন।’
তুষার আরও বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হবার পরে তারা প্রথমে পালিয়ে ছিলেন। এরপর তারা উচ্চ আদালত থেকে অগ্রিম জামিন নেন। অগ্রিম জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তারা সিরাজগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর ১৮দিন জেল হাজতে থাকার পরে আবার উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাদের বারবার বলতে থাকেন।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি মারা যাওয়ার পরে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহিদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, ‘ভিকিটিমের মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে অবগত করা হয়েছে এবং এই মামলার সঙ্গে ৩০২ (হত্যাকাণ্ড) যোগ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সারাবাংলা/এইচআই