স্বাস্থ্য সেবায় বৈষম্য দূর করাসহ ১২ দফা দাবি
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৪২ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৬
ঢাকা: দেশের স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সঙ্কট নিরসনসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের লিখিত ও উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকরা।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন ডা. মো. রেজওয়ান কবীর, ডা. ফাতেমা আক্তার, ডা. ফারজানা সাথী।
এ সময় তারা জানান, ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে (লিখিত ও মৌখিক) উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ১ হাজার ৯১৯ জন চিকিৎসক আজও ক্যাডার পদে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের দ্রুত নিয়োগ প্রদান, জাতীয় চিকিৎসক সংকট নিরসনে অত্যন্ত জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে যে দাবিগুলো জানানো হয়—
১. উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট নিরসন:
দেশের প্রতিটি উপজেলায় চিকিৎসক সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে সঠিক চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত। চিকিৎসকের অভাবে তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য মানুষ বিনা চিকিৎসায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে দ্রুত আমাদের মতো প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের নিয়োগ প্রদান করা জরুরি।
২. বিপিএসসির মাধ্যমে উত্তীর্ণদের অধিকার নিশ্চিত:
২০২১ সালে ৪২তম বিসিএসের ফলাফলে পর্যাপ্ত পদ না থাকায় আমরা ১ হাজার ৯১৯ জন চিকিৎসক নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত আমাদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন:
স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে নীতিগতভাবে দ্রুত ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা দাবি জানাই, এ নিয়োগ কার্যক্রমে ৪২তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হোক।
৪. ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ:
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শুধুমাত্র নভেম্বর মাসে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা পূর্বের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না। এ সংকট আমাদের দ্রুত নিয়োগ কার্যকর করা হোক।
৫. সাধারণ বিসিএস প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ:
সাধারণ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে যোগদান পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী সময় প্রয়োজন। বর্তমানে ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম বিসিএস প্রক্রিয়াধীন। ৪২তম বিসিএসের পরে আর কোনো চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। তাই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা সংকট নিরসন সম্ভব।
৬. গ্রামীণ জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ:
গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি সেবা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ৪২তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের দ্রুত নিয়োগ দিলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
৭. কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা চাহিদা বৃদ্ধি:
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে এবং সরকারি চিকিৎসা সেবার ওপর নির্ভরশীলতা ও চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ চাহিদা পূরণে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ অপরিহার্য।।
৮. মহিলা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন:
উপজেলা ও গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে মহিলা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবায় মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ জরুরি।
৯. স্বাস্থ্য সেবায় বৈষম্য দূর করা:
গ্রাম ও শহরের মধ্যে চিকিৎসা সেবার মানে এখনো বড় ধরনের বৈষম্য রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে আমাদের মতো অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের কাজে লাগানো অত্যন্ত
১০. জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব:
পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্থানীয়ভাবে সেবা নিশ্চিত করলে বিদেশ নির্ভরতা কমবে এবং দেশীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
১১. বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা:
‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ’ গঠনে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অন্যতম শর্ত। এই লক্ষ্য পূরণে দক্ষ চিকিৎসক নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। আমরা এ উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
১২. ৪২তম বিশেষ বিসিএসের উদ্দেশ্য সফল করা:
৪২তম বিশেষ বিসিএস চিকিৎসকদের দ্রুত নিয়োগ প্রদানের উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়েছিল। অথচ আজও আমরা নিয়োগ বঞ্চিত। দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে এ উদ্যোগকে সফল করা অত্যন্ত জরুরি।
এ সময় তারা জানান, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দাবিগুলো বিবেচনা করে দ্রুত সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। দেশের চিকিৎসা সংকট নিরসন এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় আমাদের নিয়োগ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। ৪২তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের নিয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসক সংকটের সমাধান করা অনেকাংশেই সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ।
চিকিৎসকদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকরা উন্নত বিশ্বের দেশে গেলে সেখান থেকে না ফেরার অন্যতম একটি কারণ হলো স্বাস্থ্যসেবা খাত। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ১০ থেকে ১২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা দরকার ছিল। কিন্তু এটা কখনোই ২,৩,৪— এর বেশি দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, বিগত সময়গুলোতে যারা এই রাষ্ট্র চালিয়েছেন তাদের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে রাষ্ট্রের উপযোগী করার যে আয়োজন, সদিচ্ছা— তার প্রতিটা জিনিসের ঘাটতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেজন্য বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যখন দেশের বাইরে যান চিকিৎসার জন্য সেটাও গণমাধ্যমের নিউজ হয়।
চিকিৎসকরা প্রেস ক্লাবে এসে তাদের দাবি জানাচ্ছেন। এটা রাষ্ট্রের জন্য খুবই লজ্জাজনক। তাদের যে দাবিগুলো আছে তার প্রতিটাই যৌক্তিক— যোগ করেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ।
সারাবাংলা/এসবি/এমপি