সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৫ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৩
ঢাকা: সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে করা এক রিটের আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায়ের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও উজ্জ্বল হোসেন।
পরে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বহু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে ওই সরকারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলাম। আজ ওই রিটের এক সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেছেন।
রুলে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে সরকারের বিধিনিষেধ আরোপ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়মিত পর্যটন ও সিঙ্গেল ইউজ গ্রাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ আরোপ করে অফিস আদেশ জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও সিঙ্গেলস ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে গত ২২ অক্টোবর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক) উপস্থিত ছিলেন। সভায় পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়:
ক. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণপূর্বক সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদান করবে।
খ. নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক দিনের বেলায় যাবে এবং দিনেই ফিরে আসবে, রাত্রিযাপন করতে পারবে না।
গ. ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবে।
ঘ. পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২০০০ (দুই হাজার) এর অধিক হবে না এবং
ঙ. সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষাকল্পে সমুদ্র সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দ সৃষ্টি করা যাবে না এবং বার-বি কিউ পার্টি করা যাবে না।
বর্ণিত অবস্থায়, পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উপরোল্লিখিত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
পরে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের এসব বিধিনিষেধ চ্যালেঞ্জ করে গত ২১ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট দায়ের করেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি এ এন এম হেলাল উদ্দিন।
রিটে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচচালকসহ সংশ্লিষ্ট আট জনকে বিবাদী করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমপি