চারুকলাকে চবি’র মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে সময় বেঁধে দিলেন শিক্ষার্থীরা
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:১৩ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:১৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে নগরী থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর দুই কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি না করলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ২২ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি শুরু হবে, যা ২৬ ডিসেম্বর শেষ হবে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।
সংবাদ সম্মেলনে খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘যত প্রশাসন এসেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর চারুকলাকে ফিরিয়ে নিতে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে যথাযথ বাস্তবায়ন আমরা দেখিনি। ফলে ২০২৪ সালে এসেও আমরা দেখতে পাই, চারুকলা ডিপার্টমেন্ট এখনও মূল ক্যাম্পাস থেকে বাইরে রয়েছে। তাই আমরা আর কোনো মৌখিক আশ্বাসে বিশ্বাস করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে চারুকলা প্রসঙ্গে প্রশাসন একাডেমিক সভা করার কথা থাকলেও সেটা তারা এখনও করেননি। তারা দায়িত্বের বরখেলাপ করেছে। তাই আমরা চবি প্রশাসনকে একটি আলটিমেটাম দিতে চাই। আগামী ২০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর শীতকালীন বন্ধের পর দুই কার্যদিবসের মধ্যে চারুকলা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।’
লিখিত বক্তব্যে চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান সোহেল বলেন, ‘চারুকলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার পর থেকে নজিরবিহীন দুঃশাসন, অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যবাদী আচরণ চালিয়ে আসছেন চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রশাসন। গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলে প্রশাসন ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের দমন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সকল দায়ভার নেওয়া কর্তাব্যক্তিই এ দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও নানান তালবাহানা দেখান। স্বৈরাচারী শাসক সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলাকে স্থানান্তর করা হয়েছিল বলে সবাই নানান ছুতোর আশ্রয় নেন।’
সোহেল বলেন, ‘তৎকালীন অর্থবছরে সরকারের বাজেট স্বল্পতাকে কারণ দেখিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ দাবি পূরণ সম্ভব না বলেও ঘোষণা দেন তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে গেলে তাতে ক্ষমতাশীল দলের পেটুয়া বাহিনী দিয়েও হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। আন্দোলনের ১০০তম দিনে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে নারী শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগম এবং তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রক্টর এ হামলার সাথে সরাসরি জড়িত। এ সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে এক নারী সংবাদ কর্মীও হেনস্তার শিকার হয়। সে সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন প্রতিহত করতে হুমকি ও ভীতিপ্রদর্শন করে।’
সোহেল বলেন, ‘শুধু তাই নয় সংস্কারের নামে টানা তিনমাস চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষোভ ঝাড়তে ফেলা হয় সেশন জটে। শিক্ষা জীবনের ক্ষতি রুখতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসবর্জন কর্মসূচি অব্যাহতি দিলে, তারপর থেকে শুরু হয় নানা অত্যাচার। পরীক্ষার ফলাফলে হয় কারচুপি। এক দফা দাবিতে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম, পরীক্ষার হল ও ফলাফলের ভয় দেখিয়ে করা হয় নিপীড়ন।’
নাফিসা তালুকদার নামে আরেক শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর সেই স্বার্থান্বেষী মহল চবিকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে না নিতে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে দায় স্বীকার করে সাবেক পরিচালক সুফিয়া বেগম পদত্যাগ করলেও প্ল্যানিং কমিটির দায়িত্বে অব্যাহত আছেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হচ্ছে। সকল বৈষম্য রুখতে গত ১০ ডিসেম্বর আবারও মাঠে নামে চারুকলার শিক্ষার্থীরা।’
নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে ‘চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজকে’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করে ২০১০ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউট করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীতে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
২০২৩ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউট চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। যেটা বড় আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১০ ডিসেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউট চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চারুকলা ইন্সস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) শামীম উদ্দিন খান।
সারাবাংলা/আইসি/এইচআই