পঞ্চদশ সংশোধনীর যে ৪টি বিধান বাতিল করল হাইকোর্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫
ঢাকা: পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর ৫৪টি বিধানের মধ্যে চারটি বিধান অবৈধ ঘোষণা করে সেগুলো বাতিল করেছেন আদালত। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে যে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদের হাতে এ সংশোধনীর বাকি ৫০টি বিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিট আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন-২০১১ এর ৫৪টি বিধানের মধ্যে যে চারটি বিধান বাতিল করেছেন হাইকোর্ট সেগুলো হলো-
১. সংবিধানে চতুর্থ ভাগে ৫৮ক অনুচ্ছেদ এবং ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ এর (২০১১ সনের ১৪ নং আইন)-এর ২১ ধারাবলে এই পরিচ্ছেদটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আজকের ঘোষণার ফলে সংবিধানে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ সংক্রান্ত বিধান ফিরে আসার দ্বার উন্মুক্ত হলো।
২. সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে গণভোট বাধ্যতামূলক, সেহেতু সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন আনাও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, গণভোট সংক্রান্ত সংবিধানের ১২তম সংশোধনী এখানে পুনর্বহাল হবে।
৩. সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ সংক্রান্ত সংবিধানের ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদ বাতিল করেছেন আদালত। সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ সংক্রান্ত ৭ (ক) অনুচ্ছেদে (১) বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায়— ক. এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা খ. এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে— তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।
অনুচ্ছেদ (২) কোনো ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত— ক. কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উসকানি প্রদান করিলে; কিংবা খ. কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে— তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে। (৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত ৭ ‘খ’তে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।
৪. সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশে সংবিধানের ৪৪ (২) অনুচ্ছেদে নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের বাইরে অন্যান্য আদালতকে দেওয়া ক্ষমতা সংক্রান্ত বিধান বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ সংক্রান্ত সংবিধানের ৪৪ (২) এ বলা হয়েছে, এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সকল বা উহার যে কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম
পঞ্চদশ সংশোধনী যে ৪ বিধান বাতিল সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধনী হাইকোর্ট