অনুমতির ফাইল গায়েব, নিয়ম ভেঙে চলছে ভবন নির্মাণ!
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৪২
ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ শুরু করছেন মোহাম্মদপুরের প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের ওই নেতা সুইজারল্যান্ডে বসেই ভবনের কাজ চলমান রেখেছেন। ৮ আট তলার অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ্যে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করছেন তিনি।
মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১০ নম্বর রোডের ৬/এ নম্বর হোল্ডিংয়ে এমন এক ভবন নির্মাণের সন্ধান পাওয়া যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো ভবনটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন চলছে ৯ ও ১০ তলার ইট গাঁথুনির কাজ। অথচ রাজউক কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন।
ওই ভবনের কেয়ারটেকার বাবুল আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালিক মো. ইব্রাহিম শেখ সুইজারল্যান্ডে থাকেন। ২০২০ সালের দিকে অবৈধভাবে করা নবম ও দশম তলার ছাদ রাজউকের উচ্ছেদ টিম এসে ভেঙে দিয়ে যায় এবং সতর্ক করে যায়। চার বছর পর মালিক রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই নবম ও দশম তলার কাজ ফের শুরু করে। এখন ইট গাঁথুনির কাজ চলছে। এর বেশি কিছু জানি না আমি।’
রাজউকের অনুমতিপত্রে আট তলা ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরে দু’টি করে ইউনিট থাকবে। নিচতলায় থাকে গ্যারেজ। কোনো কমার্শিয়াল স্পেস থাকবে না বলে অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে ভবনটিতে নানা অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। যেমন: প্রত্যেক ফ্লোরে তিনটি করে ইউনিট করা হয়েছে। গ্যারেজের জায়গাও দু’টি ইউনিট। সামনের দিকে রাস্তার সঙ্গে দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই এলাকায় কোনো বাসায় বাণিজ্যিক দোকান করা হয়নি।’
সূত্র বলছে, রাজউক কর্মকর্তাদের অর্থ উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে নবম ও দশম তলার নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে ইব্রাহিম শেখ। এ বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট এলাকার ইমারত নির্মাণ পরিদর্শক আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর ওই ভবনে গিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিপরীতে বাড়ির কেয়ারটেকার নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জোনের অথোরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওই ভবনের ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি ভবনটিতে চার বছর আগে অভিযান হয়েছে। সেই কাগজপত্র পেলে নতুন করে অভিযান চালানো হবে। আর ভবনটির কাজ বন্ধ করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
উচ্ছেদ অভিযানের পর এবং প্রতিবেশিদের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে নির্মাণকাজ চালু রেখেছেন। রাজউকের তদারকি বেড়ে যাওয়ায় এই কাজ দ্রুত শেষ করার পাঁয়তারা করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেখ ইব্রাহিমের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘বাড়িওয়ালা অর্থ আর রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। আমরা আইন মেনে বাড়ি নির্মাণের অনুরোধ করলেও তিনি তা রাখেননি।’ রাজউককে ম্যানেজ করে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেছেন বলে বাড়িওয়ালার দাবি।
রাজউক সূত্র জানায়, ইব্রাহিম শেখের ওই ভবনের ফাইলটি পাওয়া গেলেও ফাইলে উচ্ছেদসংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র মেলেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। এরপরেও ইব্রাহিম শেখের ভবনটি উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট আহবান করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছে রাজউক।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম