আমার গুমের জন্য শেখ হাসিনা দায়ী: মাইকেল চাকমা
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:০৮ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০২
ঢাকা: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেছেন, আমি প্রতিহিংসার আমি শিকার হয়েছি, আমার গুমের জন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করছি। প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত ছিল, তাকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেব। লিখিত অভিযোগে বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজে (মাইকেল চাকমা) গুম হওয়ার অভিযোগ জানাতে গিয়ে মাইকেল চাকমা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এর আগে, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হয়েছিলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সব জাতিসত্তার মানুষের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলাম। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের দুই দিন পর ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের একটি স্থানে আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাইকেল চাকমা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তিনবার একটি বিষয় আমাকে বলেছে, পার্বত্য চুক্তি কেন গ্রহণ করতে পারিনি? চুক্তি গ্রহণ না করা মানে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা। চুক্তি (পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি) যেহেতু সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে হয়েছে সুতরাং চুক্তির বিরোধিতা করা মানে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ—এমন বলেছে আমাকে।
মাইকেল চাকমা বলেন, আমি কী গ্রহণ করব, না করব এর অধিকার আছে। মূলত শেখ হাসিনা যে খুন গুম করে মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য এগুলো করেছেন। তবে কারা গুম করেছিল, তাদের পরিচয়, চেহারা জানতে পারেননি। প্রশ্ন করাও বারণ ছিল।
গুম করার ঘটনা বর্ণনা করে মাইকেল চাকমা বলেন, ঢাকার কল্যাণপুরে একটা জায়গায় গিয়েছিলাম। সেখানে পেছন থেকে একজন আমার নাম ধরে ডাকেন। আমি তাকাতেই কয়েকজন মিলে আমার জামার কলার, কোমরের বেল্ট ও হাত ধরে ফেলেন। তাৎক্ষণিক একজন মুঠোফোনে গাড়ি ডাকেন। দ্রুত গাড়ি চলে আসে এবং আমাকে ওই গাড়িতে (মাইক্রোবাসে) তোলা হয়। গাড়িতে তুলেই হাতে হাতকড়া এবং চোখ কালো কাপরে বাঁধা হয়।
মাইকেল বলেন, চোখ বাঁধার আগে চালকের পাশের আসনে একটি ওয়াকিটকি দেখেছিলাম। পেছনের আসনে কয়েকটি বাটন মোবাইলও দেখি। পরে ঘণ্টাখানেক যাত্রা করে আমাকে একটি স্থানে নেওয়া হয়। সেখানে এক রাত রেখে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। সেখানেই আমি পাঁচ বছর তিন মাস ২৭ দিন ছিলাম।
মাইকেল চাকমা আরও বলেন, শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে খাগড়াছড়িতে একটি নির্বাচনি সমাবেশে গিয়েছিলেন। সেদিন আমাদের ছাত্র সংগঠনের একটি অবরোধ ছিল। সমাবেশ ২টায় শুরুর কথা থাকলেও অবরোধের কারণে দুই ঘণ্টা দেরিতে বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয়। সেই সমাবেশের বক্তব্যে শেখ হাসিনা অবরোধ পালনকারীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
এদিন মাইকেল চাকমার মৌখিকভাবে অভিযোগ গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
পরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মাইকেল যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই মামলা চলমান রয়েছে। তবে অতিরিক্ত কারও সন্ধান পেলে তদন্ত করা হবে। দেশের সব গুমের মূলত একটা সূত্র ধরেই তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পৃথকভাবে তদন্ত করা হবে।
এ সময় মাইকেল চাকমার সঙ্গে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ এবং ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমানসহ অনান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ