নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করেছেন : রিজভী
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৮ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০২
ঢাকা: নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) শান্তিনগর এলাকায় কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত নিজেদের প্রভু মনে করে। তা না হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কীভাবে বলেন- ‘১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’? তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখণ্ডকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ছোট করলেন, অবজ্ঞা করলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা লুঙ্গি কষে বেঁধে নদী-নালা, খাল-বিল, জঙ্গল থেকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছেন। আপনারা (ভারত) বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছেন। তাহলে এটা বাংলাদেশের বিজয় দিবস না হয়ে ভারতের বিজয় দিবস হয় কী করে?’’
‘‘তার মানে উনারা (ভারত) আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করতে চান। আমাদের যে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিল, সেটিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে চান। আমেরিকা যখন যুদ্ধ করছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, তখন ফ্রান্স আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল। কই ফ্রান্স তো বলে না, এটা তাদের বিজয় দিবস’’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা তাদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিল ওই জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? আপনি (মোদি) বলছেন, এটা আপনাদের বিজয় দিবস, এটা ভারতের বিজয় দিবস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানী একটি কথা বলেছিলেন, ভারত যদি আমাদের সহযোগিতা নাও করত, তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো।’’
রিজভী বলেন, ‘‘আজকে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, হামিদুর রহমান— এই যে বীরশ্রেষ্ঠ, তারা কীসের জন্য জীবন দিয়েছে? ওরা কি ভারতের বিজয়ের জন্য জীবন দিয়েছে? নাকি স্বাধীন- সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যুদ্ধ করেছে?’’
দিল্লির নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন, তাহলে ভারত থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার কেন? শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে- এই মনোকষ্টে আপনারা অসংখ্য মিডিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য রাখছেন। আপনাদের এত প্রেম কেন শেখ হাসিনার জন্য? এটারও কারণ আছে। কারণ, ভারতের বিএসএফ আমাদের সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করে। শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এটার প্রতিবাদ করে।’’
রিজভী বলেন, ‘‘দিল্লির সিংহাসনে যারা আছেন, তারা মনে করেন- আমরা অন্যায় করি, বাংলাদেশিদের হত্যা করি, শেখ হাসিনা তো টু শব্দ করে না। এরকম প্রধানমন্ত্রীই তো আমাদের দরকার। সে কারণে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হোক না হোক, যত বড় ফ্যাসিস্টই হোক শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে। বিগত ১৬ বছর দিল্লি ছাড়া শেখ হাসিনাকে দুনিয়ার কোনো দেশ সমর্থন করেনি।’’
ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা সমস্ত শিষ্টাচার, সমস্ত রাষ্ট্রাচার, সমস্ত কূটনীতিকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা, মিথ্যা কথা, অপপ্রচার, অপতথ্য দিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সারা দুনিয়ার মানুষ জানে বাংলাদেশ কত সম্প্রীতির দেশ, কত শান্তির দেশ। যারা আমাদেরকে ঘৃণা করে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে তাদেরকে বলে রাখি, এই বিষোদগার যতদিন করবেন, ততদিন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করে যাব।’’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়াল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/আরএস