এক্সপ্রেসওয়ে
জিইসি মোড়ে র্যাম্প নির্মাণ বন্ধের পক্ষে চসিক মেয়র
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৫ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন পেনিনসুলা হোটেলের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের বিপক্ষে অবস্থান জানালেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মেয়র বলেছেন, একজন ব্যক্তির লাভের জন্য পুরো শহরে যানজট করতে পারি না।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসন’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় মেয়র একথা বলেন।
গত ৫ ডিসেম্বর ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কার্যকর করতে ‘জিইসি র্যাম্প’ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) পাঁচ শতাংশ লোককে সুবিধা দিতে গিয়ে ৯৫ শতাংশ নাগরিকের চলাচল সংঘাতময় করে তুলছে।
এরপর একই ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখানে র্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না- এটা আমি মেয়র হিসেবে স্ট্রংলি বলতে চাই। আমি সিডিএকে বলেছি, সিডিএর চেয়ারম্যানকে এবং এখানে সিটি নিয়ে যারা পরিকল্পনা করে তাদেরও বলেছি। নগর পরিকল্পনা নিয়ে যারা ভাবেন, তারাও এই র্যাম্পের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয় এই জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে- কোনো একজন ব্যক্তির লাভের জন্য আমরা আমাদের সিটিতে যানজট করতে পারি না।’
‘এটা ওই সময়কার একজন ব্যবসায়ীকে খুশি করার জন্য, তার হোটেলের ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য একটা র্যাম্প সেখানে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তার হোটেলের যাত্রীগুলো খুব দ্রুত এয়ারপোর্ট চলে যাওয়ার জন্য। আমি সেদিন উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের সামনে স্পষ্ট বলেছি, যারা সাংবাদিক ছিলেন তারা হয়তো আমার কথা শুনেছেন। আমি বলেছি যে, পেনিনসুলার (হোটেল) যে মালিক তাকে খুশি করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। এখানে জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সেটা করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন এবং সব সংস্থার সমন্বয়ের ওপর জোর দেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবগুলো সেবা সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন। ব্যাটারিচালিত রিকশার যত্রতত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কর্ণফুলী ব্রিজের পাশে যানজট হচ্ছে, সেটার জন্য আমরা ডিসি মহোদয়কে একটা জায়গা ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। আশা করছি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী ব্রিজের পাশে বাস টার্মিনাল অথবা বাস স্টেশন চালু হবে। আর বহদ্দারহাটে একটা বাস টার্মিনাল আছে, এটাতে আসলে পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। সেখানে টয়লেট ফ্যাসিলিটি নেই, লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও কম।‘
মেয়র আরও বলেন, ‘যত্রতত্র বাসসহ যেকোনো যানবাহন দাঁড়াতে পারবে না। যাত্রী ছাউনি, বাস স্টপেজ যেখানে থাকবে, সেখানেই দাঁড়াতে হবে। এ জায়গায় আমাদের কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়ানোর কারণে কেবল যে যানজট বাড়ছে তা নয়, বরং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এই অব্যবস্থাপনা।’
সভায় নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘একটি শহরকে শৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন। চট্টগ্রামে সড়ক আছে মাত্র ১০ শতাংশ। আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পার্কিংয়ের সংকট। অতি দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে পার্কিং প্লেস নির্ধারণ করা জরুরি। আনফরচুনেটলি দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিভিন্ন যে কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, মার্কেটগুলো আছে তারা তাদের যে পার্কিংগুলো আছে, সেই পার্কিংগুলোকে অকুপাইড করে রেখেছে অন্য কাজে। এগুলো উন্মুক্ত করা দরকার।’
‘একটা মার্কেটে যদি দোকান থাকে ধরে নিলাম ১০০টা, পার্কিং প্লেস আছে ৫০টা। কিন্তু আনফরচুনেটলি দোকান মালিকরা সেখানে নিজেদের গাড়ি রেখে দেয়। তাহলে যারা কাস্টমার তারা গাড়িগুলো রাখবে কোথায়? চাপ থাকে কখন? অফিস আওয়ার, স্কুল আওয়ার। চট্টগ্রাম শহরের বড় বড় স্কুলগুলা হচ্ছে সবগুলা শহরের মেইন স্পটে, যার কারণে এখানে যানজটটা হয়। আপনি দেখবেন ওই সময়ের পরে কিন্তু রাস্তায় খুব একটা চাপ পাবেন না। কিন্তু তারপরও আপনি চাপ পাবেন মোড়কেন্দ্রিক। দেখা যায়, আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের কারণে এই চাপটি তৈরি হয়। এজন্য বাসগুলোকে কিছু কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসা দরকার।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান, বিআরটিএ’র পরিচালক মো. মাসুদ আলম, ট্রান্সপোর্ট প্রফেসনালস অ্যালাইয়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নুরুল হাসান, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম