স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কৃষিতে গুরুত্ব ও অনতিবিলম্বে স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ণের দাবি
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৪১ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৪৩
ঢাকা: মানবাধিকার কর্মী, কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, আমরা যদি স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি করতে চাই, পুষ্টির বিষয়ে উন্নতি করতে চাই, তবে আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হতে হবে কৃষি। যদি এই খাতকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে উন্নত করতে পারি, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে। এজন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বন্ধ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে একটা কৃষিনীতি কিন্তু আমরা প্রণয়ন করতে পারি। সেক্ষেত্রে ক্যান্সারসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ কমে আসবে। একই সঙ্গে আমাদের চিকিৎসা শাস্ত্র ও প্রযুক্তিতে জ্ঞান আয়ত্ত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের একটা স্বাস্থ্যনীতিও লাগবে। আমি জানি না, ড. ইউনুস কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু স্বাস্থ্যনীতি অনতিবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
‘জাতীয় আলোচনা সভা: শ্বেতপত্র – স্বাস্থ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ। এ সময় সদ্য প্রকাশিত শ্বেতপত্রের আলোকে দেশের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও পেশাজীবীরা আলোচনা করেন। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল হেলথ পলিসি এন্ড সিস্টেমের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌফিক জোয়ার্দার।
ফরহাদ মাজহার বলেন, আমাদের ৬৭ শতাংশ অসুখ হলো এনসিডি বা অসংক্রামক ব্যাধি। এটা হয় কারণ আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ঠিক নাই, আমাদের কৃষি ব্যবস্থার ঠিক নাই, আমাদের পুষ্টি ব্যবস্থার ঠিক নাই। এ কারণে ক্যান্সার হচ্ছে, ডায়াবেটিস হচ্ছে। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা ঠিক করা ছাড়া স্বাস্থ্যখাতের কিছু ঠিক করা যাবে না। স্বাস্থ্যখাত শুধু সেবা দেওয়া সংশ্লিষ্ট বিষয় না। এটা বাজারের একটা পার্ট। এর সঙ্গে কিন্তু কৃষি ও পুষ্টিরও ভূমিকা আছে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারি হাসপাতালকে কম গুরুত্ব দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালকে যেভাবে প্রাধান্য দিচ্ছি, সেটা এক ধরণের ক্রিমিনাল অফেন্স। কারণ সরকারি হাসপাতালে গরীব মানুষ সেবা পায়। কিন্তু যখন থেকে অবাধ বাজার ব্যবস্থা শুরু হয় অর্থাৎ আশির দশক থেকে আমরা সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে অবহেলা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন যে এখানে বাজারই ঠিক করে সবকিছু। আমরা কিন্তু নিজেরাই ভ্যাকসিন বানাতে পারতাম। আমরা কোভিড-১৯ টেস্ট কিটও বানাতে পারিনি। শুধু দুর্নীতি ধরেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঠিক করে ফেলা যাবে না, খাদ্য এবং কৃষি ঠিক করতে হবে।
আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের দর্শন শ্বেতপত্রে প্রতিফলন দরকার ছিল। আমি রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছি তার জন্য একটা নির্দেশনা খুব দরকার। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি খুঁজে বের করা জটিল কঠিন কোনো কাজ নয়। শ্বেতপত্রের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বৈষম্যের কারণ খুঁজে বের করা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশে পুষ্টির যে ধারণা, তা কিন্তু ওয়েল স্টাবলিশড না। আমরা যদি ইনফ্যান্ট নিউট্রিশনের দিকে তাকাই, আমাদের দেশে প্রসেস ফুডের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে পুষ্টির কনসেপ্টটা কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এখানে, পুষ্টির ধারণা ভাত খাওয়ার পর ফল খাওয়ার পর সীমাবদ্ধ। তারপর আমিষের উৎসের জন্য মাছও সহজলভ্য না। আমাদের পুষ্টির মান নিশ্চিত করতে খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে থেকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা জরুরি।
আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে দরকার সত্যিকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন অনেক কিছু প্রস্তাব করেছিলাম। সেখানে প্রথম প্রস্তাব ছিল স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখন সবকিছু এলোমেলো। সবাই সেখানে পদায়ন নিয়ে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের যে বর্তমান দুরবস্থা তা দূর করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা যখন বলি হেলথ ফর অল, সেটা মিন করেই বলা উচিত। কিন্তু আমাদের হেলথ পলিসি নাই। জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত, কিন্তু আমাদের তো এক শতাংশও নাই। তারপর আবার দুর্নীতি হলে, থাকলো টা কী? আমি মনে করি যে ডাক্তারের ফি দিতে পারবেনা সেও যেন চিকিৎসা পায়।
আলোচনা সভায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. শারমিন নিলোর্মি বলেন, শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য না থাকলে এক ধরনের প্রত্যাশা থাকতো। কিন্তু আমাদের চোর ধরবার দক্ষতা নেই। যারা চুরি করেন, তারা প্রমাণ রেখে করেন নি। আমরা স্বাস্থ্যখাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি এবং সেকেন্ডারি লিটারেচার রিভিউ করেছি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক ডা. কাজী সাইফউদ্দীন বেনু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ ও আইসিডিডিআর,বি’র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আসফিয়া আজিম, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটের সহকারী পরিচালক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এসএম খালিদ মাহমুদ শাকিল, আইসিডিডিআর’বি,র এইচআইভি ও এইডস প্রোগ্রাম বিভাগের প্রধান ডা. শারফুল ইসলাম খান (ববি) প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসবি/আরএস