চালু হচ্ছে ঢাকা-খুলনা পথে রেল চলাচল, উদ্বোধন ২৪ ডিসেম্বর
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০১ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৩২
ঢাকা: অবশেষে শুরু হচ্ছে ঢাকা-খুলনা পথে যাত্রীবাহী রেল চলাচল। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ হয়ে খুলনার পথে রেল চলাচল শুরু হচ্ছে ২৪ ডিসেম্বর। ওই দিন এর উদ্বোধন করবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে নতুন দুই জোড়া আন্তনগর যাত্রীবাহী ট্রেন দিয়ে এই পথে যাত্রা শুরু হবে। ঢাকা থেকে কাশিয়ানী জংশন হয়ে খুলনা ও বেনাপোলে চলাচল করবে এই নতুন ট্রেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে, ঢাকা-খুলনা পথে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে ‘রূপসী বাংলা’ নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা- বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেন দুটি। এই ট্রেন লাইন নির্মাণের ফলে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে গেছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ । এই পথে ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়া যাবে পৌনে চার ঘণ্টায়। এখন বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে যাতায়াতে সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা।
রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত আটটায় যা, খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে।
অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোল পৌঁছানোর কথা দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনার পথে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চলাচল করে। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী- কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এতে প্রায় আট ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা।
এই পথে ট্রেন চালু করতে গত বছর ২০২৩ সালে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত নতুন লাইন চালু হয়। সে জন্য ঢাকা থেকে ভাঙা, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে খুলনার পথে ট্রেন চালু করা হয়। এর মধ্যে যশোর পর্যন্ত পুরোটা নতুন রেলপথ চালু হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস নতুন পথে চালু করার উদ্যোগ নিলে কুষ্টিয়ার স্থানীয় জনগণ বাধা দেয়। আন্দোলনের হুমকি দিলে উক্ত পরিস্থিতিতে রেল কর্তৃপক্ষ সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস চলাচলের পথ ঠিক রেখে কাশিয়ানী হয়ে নতুন রেলপথ দিয়ে জাহানাবাদ ও রূপসী বাংলা চালু করছে। ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার পথে নতুন একটি ট্রেন চালু করা হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তখন সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস নতুন পথ দিয়ে চলাচল করবে।
রেলের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন গনমাধ্যমকে জানান, আপাতত এই দুই জোড়া ট্রেন দিয়ে এই পথে যাত্রী পরিবহন করা হবে। ভবিষ্যতে যাত্রীচাহিদা ও ইঞ্জিন-কোচের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ট্রেন আরও বাড়ানো হবে।
এর আগে এই পথে ট্রেন চালু করার জন্য গত ২ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হয়। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছিলো জনবল সংকটের কারনে ওই পথে রেল চলাচল শুরু করা যাচ্ছেনা। তবে ডিসেম্বর মাসের যেকোনো সময়ে ট্রেন চালুর কথা জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে এই পথে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জেআর/এনজে