এক নারী উপদেষ্টার যোগসাজশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখলের অভিযোগ
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:০১ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৩
ঢাকা: সরকারের একজন প্রভাবশালী নারী উপদেষ্টার যোগসাজশে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছেন এর প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের একমাত্র জীবিত সদস্য ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরিন হক সরকারের একজন নারী উপদেষ্টার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে অবৈধভাবে চর দখলের মতো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্যে হচ্ছে দুর্নীতি ও দুষ্টু চক্র রক্ষা করা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী কল্যাণ তহবিলের কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও বিভিন্ন জমি বিক্রির পাঁয়তারা অনেক প্রকল্প বন্ধে এই দুষ্টু চক্র বদ্ধপরিকর।’
তিনি বলেন, ‘‘গত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী এমপি এ কে আজাদ গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস দখলের জন্য তার মালিকানাধীন মিডিয়া ও নিউজ পেপার এর মাধ্যমে আমাকে ও ট্রাস্টিদের নিয়ে গুজব ও প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকে যা এখনও অব্যাহত আছে। এ কে আজাদ ও শিরিন হকের যোগসজশে মেডিকেল কলেজের কিছু সাবেক ডাক্তারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভ দেখিয়ে কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তাদের তথাকথিত প্রোগাণ্ডা বাস্তবায়নের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’
ডা. শিরিন হক এবং একে আজাদ ছাড়াও কক্সবাজার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র ডাইরেক্টর ডা. মনজুর কাদির আহম্মেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টি ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘‘ডা. মনজুর কাদির আহম্মেদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নবীন সদস্য মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং অতি সুকৌশলে অল্প সময়ের ম্ধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অন্য পন্থায় উদ্বুদ্ধ করে কব্জায় নিয়ে আসেন; যা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনেকেই অবহিত। তার বিরুদ্ধে পটুখালীতে জমি কেনার কথা বলে ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। সে বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে। তিনি সামাজিক মেডিকেল কলেজে মিথ্যা সনদ দাখিল করে ফিজিওলজি ও পরবর্তীতে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরিতে প্রায় ৯ লাখ টাকা সম্মানী ভাতা উত্তলন করেছেন। তার জাল সনদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ (ডিএমডিসি) সরাসরি অভিযোগ দাখিল করেছে, যার সূত্র নং ১৩ মার্চ, ২০২৪।’’
এছাড়া গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকারের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেন ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার বিদেশি ছাত্র কোটার বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করছেন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়া ও বিতর্কিত ট্রাস্টি ডা. কাসেম চৌধুরী।’’
ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘উল্লেখিত ট্রাস্টিগণ দুষ্টু চক্রকে রক্ষা করার জন্য অন্যায়ভাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখল করে একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে ডা. মনজুর কাদির আহম্মেদ, ডা. কাসেম চৌধুরী, ডা. কণা চৌধুরীদের নির্দেশে গত ২৪ আগস্ট জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে আমাকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে একমাত্র বৈধ প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি হিসেব আমি ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ ১ ডিসেম্বর ডা. মনোয়ারা বেগম, প্রফেসর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ও ডা. গোলাম রহমানকে নিয়ে নতুন ট্রাস্টি দলিল সম্পাদন করি এবং ১৭ ডিসেম্বর সভা করতে গেলে একইভাবে বর্তমান সরকারের এক নারী উপদেষ্টার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রাস্টি সদস্যদের বাধা দেয় এবং বিভিন্নভাবে ট্রাস্টি সদস্যদের হেনস্থা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র জনতার গণবিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে দুর্নীতিবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেখানে সরকারের একজন নারী উপদেষ্টার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে এ ধরনের হস্তক্ষেপ সত্যিই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।’’
রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, দখলদারদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধান উদেষ্টার দৃষ্টি আকরষণ করেন ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখলের সঙ্গে জড়িত নারী উপদেষ্টার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা সবই বোঝেন এবং জানেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তার নাম আমি উল্লেখ করতে চাই না। এ ব্যাপারে আপনারা আমাকে অনুগ্রহ করে জোর করবেন না। নিজেদের সোর্স এবং বিবেক বুদ্ধি ব্যবহার করে আপনারা লিখুন।’’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. মনোয়ারা বেগম, প্রফেসর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ও ডা. গোলাম রহমান।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ