আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বাড়াতে জাইকা’র অনুদান
প্রশিক্ষণ ব্যয় ঠিক রেখে অন্যান্য ব্যয় যৌক্তিক করার নির্দেশ
২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০২
ঢাকা : দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা ও নতুন উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়াতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ‘আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও নতুন উদ্ভাবনী সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুদান দিচ্ছে ‘জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা’ (জাইকা)। অতি সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির ‘বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’র (এসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রকল্পের প্রশিক্ষণ খাতের প্রস্তাবিত ব্যয় ঠিক রেখে অন্যান্য খাতের ব্যয় যতটা সম্ভব কমিয়ে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৩ কোটি টাকা অনুদান দেবে জাইকা এবং অবশিষ্ট ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা দেবে সরকার।
প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’র সভায় প্রকল্পটির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আমরা বলেছি যে, অনুদানের টাকা বলে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ব্যয় করা যাবে না। শুধু প্রশিক্ষণ খাতের প্রস্তাবিত ব্যয় ঠিক রেখে অন্যান্য খাতের ব্যয় কমাতে হবে। আমরা চাই সত্যিকার অর্থেই যেন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
এসপিইসি সভা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৪ কোটি টাকা এবং ১০ জন পরামর্শক বা এক্সপার্ট বাবদ ৩ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১৩টি আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য ৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা,অফিস রুম রেনোভেশনে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের আওতায় ২টি যানবাহন ব্যবহারের জন্য ভাড়া বাবদ এক কোটি ৪৬ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
অন্যান্যের মধ্যে প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে থোক হিসাবে ৭৫ লাখ টাকা; যন্ত্রপাতি ও মেরামত খাতে ৭ লাখ টাকা; কম্পিউটার কনজিউম্যাবল খাতে ৯ লাখ টাকা; টিএপিপিতে মিড টার্ম- ফাইনাল রিভিউ ও মনিটরিং খাতে ৯০ লাখ টাকা; অডিও ভিডিও ও ফিল্ম প্রডাকশন খাতে ৮০ লাখ টাকা; প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং খাতে ৪৪ লাখ টাকা; সার্ভে খাতে ৫০ লাখ টাকা ও কম্পিউটার মেরামত খাতে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রশিক্ষণের সংখ্যা, প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু, পরামর্শক সংখ্যা, জনমাস ও প্রকল্পের কর্মপরিধি, প্রকল্পের অফিস রুমের অবস্থান ও প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বিভ্ন্নি খাতে ব্যয় কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) অন্যতম কাজ। আইটিভিত্তিক মানবসম্পদ উন্নয়ন,আইটি শিল্পের রফতানিমুখী উন্নয়ন ও নাগরিক বান্ধব আইটি প্রযুক্তির ব্যবহার আইসিটি বিভাগের দক্ষতা বাড়াতে প্রকল্পটির মাধ্যমে আইসিটি শিল্পের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যা প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি এবং আইসিটি গ্র্যাজুয়েটদের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়বে। প্রকল্পের আওতায় আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির ইঞ্জিনিয়ারদের জাপানের সহায়তায় কাটিং এজ টেকনোলজীর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি করা হবে। আইটি বা আইটিইএস খাতে উচ্চ রফতানি আয়ের জন্য এ প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, আইসিটি শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সেতু বন্ধন স্থাপন করা হবে। এর ফলে আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির একটি কাঠামো তৈরি হবে। প্রকল্পটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও নতুন উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়াতে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি আইসিটি খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য আইসিটি পেশায় দক্ষতা তৈরি করবে এবং আইসিটি পণ্য ও পরিষেবার মান উন্নতকরণ, দেশে কম্পিউটারাইজেশন ও অটোমেশনে সহায়তা দেওয়া হবে। এসব কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ৩০টি স্থানীয় প্রশিক্ষণ আয়োজন, ৫টি বিদেশি প্রশিক্ষণ, স্টাডি ট্যুর, মিটিংয়ের আয়োজন, বৈদেশিক ভ্রমণ ব্যয়, ১০ জন কনসালটেন্ট বা এক্সপার্টস নিয়োগ এবং ১০টি কম্পিউটার অ্যান্ড এক্সেসরিজ ক্রয়।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস