‘বাংলার ভূখণ্ডের দিকে তাকালে সেভেন সিস্টার টুকরো টুকরো করে দেওয়া হবে’
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৯ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১৮
ঢাকা: বাংলার ভূখণ্ডের দিকে তাকালে সেভেন সিস্টার ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের প্রতিবাদে এই নাগরিক সমাবেশ আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’।
রাশেদ প্রধান বলেন ‘‘নরেন্দ্র মোদি যে বিব্রতকর তথ্য দিয়েছেন, আমি বলব- এটা বিব্রতকর না, এটা অশালীন বক্তব্য। তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং আমাদের এই প্রতিবাদটা জারি রাখতে হবে। শুধু নরেন্দ্র মোদির এই বক্তব্য নয়, ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে। না হলে বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করার চেষ্টা করবে ওরা।’’
তিনি বলেন, ‘‘কথাবার্তা পরিষ্কার। বাংলার মাটিতে আওয়ামী প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্র এবং ভারতীয় আগ্রাসন- আধিপত্যবাদকে আর গ্রহণ করা হবে না। আর ওই ভারতীয় মিডিয়া, গণমাধ্যম, নরেন্দ্র মোদিসহ সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, আপনারা যে মিথ্যাচর, ষড়যন্ত্র করছেন- কথাবার্তা পরিষ্কার, বাঘের গর্জন সহ্য হয়, হুনুমানের ভেংচি সহ্য হয় না। ভারতে বসে ভারতীয় গণমাধ্যমে ভেংচি কাটবেন না। বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে, প্রতিরোধ করতে জানে, রক্ত দিতে জানে। বাংলার ভূ-খণ্ডের দিকে তাকালে আপানাদের সেভেন সিস্টারকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হবে, ইনশাল্লাহ।’’
রাশেদ প্রধান বলেন, ‘‘একাত্তরে ভারত আমাদের শরণার্থীদের জায়গা দিয়ে বিশ্বের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য এনেছে। আর আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছে পাকিস্তানকে দুর্বল করার জন্য। সুতরাং একাত্তরের যুদ্ধে ভারত আমাদের শুধো-শুধি সাহায্য করে নাই। পাকিস্তানের শক্তি হ্রাস করার জন্য করেছিল এবং ব্যবসা করার জন্য করেছিল। বিজয়ের মহেন্দ্র ক্ষণে ভারতীয় বাহিনী যখন বাংলাদেশে ঢুকেছে তখন ৯ মাসের যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে, বিজয় আমাদের সন্নিকটে, সেই সময় তারা ঢুকেছিল যুদ্ধের অস্ত্র-শস্ত্র লুট করার জন্য।’’
তিনি বরেন, ‘‘লুটপাট করে ভারতে যাবার পথে তারা বাধার মুখে পড়েছিল। ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। মেজর জলিল তাদের বাধা প্রদান করেছিলেন। ভারতীয় বাহিনী যে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, সেটায় বাধা দেওয়ার জন্য নতুন জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বন্দি হয়েছিলেন মেজর জলিল। তাকে গ্রেফতার করেছিল তৎকালীন শাসকরা, সরকারের গুণ্ডা-পাণ্ডারা।’’
রাশেদ প্রধান বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল নাটক করা, সিনেমা করা। নাটক মঞ্চস্থ তারা করেছিল রেসকোর্স ময়দানে। যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তানি কমান্ডার যে টেবিলে বসে স্বাক্ষর করেন, সেখানে আমাদের দেশের প্রতিনিধি ওসমানী সাহেবকে বসতে দেওয়া হয় নাই, বসেছিলেন ভারতে অরোরা। এই চিত্রটা দেখিয়ে তারা যুগের পর যুগ বলতে চায় যে, যুদ্ধটা হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে।’’
আয়োজক সংগঠনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যদি মনে করে থাকেন, নরেন্দ্র মোদি এবার বিজয় দিবসে যা বলেছেন, ‘‘ভারতের বিজয় দিবস’’ এই তথ্য তিনি প্রথম দিয়েছেন, তাহলে আমি দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, তথ্যগুলো জানতে হবে, সচেতন নাগরিক হতে হবে। তারা একাত্তরের পর থেকেই দাবি করছে– এ যুদ্ধ ভারত এবং পাকিস্তানের।’’
রাশেদ প্রধান বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা যাওয়ার পরে সবাই যেমন ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেয়েছেন, শক্তি পেয়েছেন, আল্লাহ’র কসম লাগে এই মুখ আর বন্ধ রাখবেন না। এই বাংলার মাটিতে ভারতের আগ্রাসন আর চলতে দেওয়া হবে না। তারা সীমান্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না, তারা আমাদের দেশের গণতন্ত্রকে হরণ করছে, তারা ভোটাধিকার ম্যাকানিজম করে পাল্টে দিচ্ছে। এটা আজকের ঘটনা না, যুগ থেকে যুগান্তরে তারা করে যাচ্ছে।’’
সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে নাগরিক সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য নুর আফরোজ জ্যোতি প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/আরএস