Friday 20 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সবজিটা এখন খেতে পারছি, আলু আরেকটু কমলে হতো’

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০৬ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:১৯

শীত বাড়তে থাকায় বাজারে বেড়েছে সবজির সরবরাহ, দামও কমছে। অন্তত সবজিতে হলেও কিছুটা তাই স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘মাস দুয়েক ধরে সবজি কিনতেই কষ্ট হয়েছে। এখন দাম মোটামুটি কমেছে। সবজিটা এখন খেতে পারছি। আলুর দামটা আরেকটু কমলে ভালো হতো। শীতের সময়ই সবজি একটু কম দামে পাই। মনের মতো করে সবজি খাওয়ার তো এটাই সময়।’

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচাবাজারে সপ্তাহের বাজার করতে যাওয়া গৃহিণী নিশা আক্তার এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন সারাবাংলার কাছে।

শীত যতোই জেঁকে বসছে, বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ছে। বলা যেতে পারে, বাজার এখন সবজিতে ভরপুর। এর ফলে নিত্যদিন দামও কমছে। অধিকাংশ সবজিই, বিশেষ করে শীতেরগুলো এখন প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে আছে। আলুর দামও কিছুটা কমেছে, তবে তাতেও স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন সবজি ঢুকছে বাজারে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

এর বাইরে মাছ-মাংস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দাম এক সপ্তাহের মধ্যে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। তবে চালের দর ঊর্ধ্বমুখী। এ ছাড়া এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আবারও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট শুরু হয়েছে।

সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি কেজি মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও এর দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ছিল। বিভিন্ন ধরনের বেগুন ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শিমের দাম ১০০ টাকা থেকে কমে মানভেদে ৬০-৬৫ টাকায় এসেছে। মূলা, ঢেঁড়শ, তিতা করলা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় মিলছে।

এ ছাড়া লাউ, শসা, পটল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, ধুন্ধল ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে আছে। ধনেপাতা ও কাঁচামরিচের দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৫০ টাকায় নেমেছে। ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রিয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ রফিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) বাজার রেট কম। এক সপ্তাহে প্রত্যেকটা সবজির দাম অনেক কমেছে। ১০-২০ টাকা করে কেজিতে কমেছে। নতুন আলুর দামও কেজিতে অন্তত ১০ টাকা কমেছে।’

সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে নতুন আলুর দাম কেজিতে আরও ১০ টাকা কমে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাল আলু, সাদা আলু, বগুড়ার আলু, মুন্সিগঞ্জের আলুও দাম কমে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা নিশা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘৭০ টাকায় আলু কিনতে হবে, এটা খুবই কষ্টের। আমরা সীমিত আয়ের মানুষ। আবার আলু ছাড়া তো চলে না। প্রায় সব তরকারিতেই আলু দেওয়া যায়। আলুর দামটা অন্যান্য সবজির মতো আরও কমলে আমরা একটু স্বস্ত্বি পেতাম।’

বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। বিক্রেতারা জানালেন ২৫ কেজির বস্তায় অন্তত ১০০ টাকা ও ৫০ কেজির বস্তা ১৫০ টাকা বেড়েছে দাম।

ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম থাকলেও দেশি পেঁয়াজ এখনো ১৪০ টাকা কেজি পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চালের মধ্যে কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২০৫০ থেকে ২১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল ৫০ কেজির বস্তা ৩৯৫০ টাকা, বেতি আতপ ৫০ কেজির বস্তা ৩৫০০ টাকা, হাফ সেদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৮২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট শুরু হয়েছিল। খুচরা পর্যায়ে দোকান থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল অনেকটা উধাও হয়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে গত ৯ ডিসেম্বর সরকার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম পুননির্ধারণ করে দেয়। দুই ধরনের সয়াবিন তেলেই লিটারে দাম বাড়ে ৮ টাকা। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকায় দাঁড়ায়। আগে বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা ও খোলা তেল ১৪৯ টাকায় বিক্রি হতো। দাম পুননির্ধারণের পর বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবারহ স্বাভাবিক হয়।

বিজ্ঞাপন

এর এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত দুদিন ধরে চট্টগ্রামে মুদি দোকানে আবারও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিশোধন কারখানাগুলো থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় এ সংকট চলছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দামে তেমন একটা প্রভাব দেখা যায়নি। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ে রাজীব স্টোরের মালিক রিপু নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সয়াবিন তেলের বোতল আর পাচ্ছি না। পুষ্টি কোম্পানি এক লিটার, পাঁচ লিটারের তেলের বোতল দিচ্ছে না। রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেল বাজারে আসছেই না। আমাদের কাছে পুরনো যেসব তেলের বোতল আছে, সেগুলো বিক্রি করছি।’

বাজারে খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৩৫-১৪০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ দরে বিক্রি হয়েছে।

মুদি দোকানে প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই কেজি প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মাছের দামেও খুব একটা পার্থক্য দেখেননি ক্রেতারা। গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হয়েছে বেশির ভাগ মাছ। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

খুচরায় প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারে মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি প্রতিকেজি ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি কেজিতে ৫০ টাকা কমে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৯৫০ টাকা ও হাড়সহ ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মাছের মধ্যে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি /টিআর

নিত্যপণ্যের বাজার বাজার বাজারদর সবজির দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর